শেখ আদনান ফাহাদ
বিশ্বের বৃহত্তম ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র বলে তকমা আছে ভারতের। কিন্তু গণতন্ত্রের এই বিশাল জামার নিচে কত অগণতান্ত্রিক সামাজিক প্রক্রিয়া চালু আছে সে দেশে, সেটি ভাবলে গা শিউরে উঠে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে বহুসাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের রাষ্ট্র ভারত যেনতেন ভাবে শুধু ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হওয়ার সর্বনাশা দৌড়ে শামিল হয়েছে। এই দানবীয় যাত্রাপথে নিষ্পেষিত হচ্ছে ভারতের কোটি কোটি মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের লোকেরা। এমনকি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েমের জবরদস্তিমূলক বাতাবরণেও স্বয়ং হিন্দু সমাজের বিশাল এক অংশ নিষ্পেষিত হচ্ছে বৈষম্যের যাঁতাকলে। হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়েও এরা নিজেদের খুঁজে ফিরছে মানবতার মিইয়ে যাওয়া সাগরতটে। এই অংশটিকে আমরা জানি ‘দলিত’ হিসেবে।
মুসলমান আর দলিতদের অবস্থান যেন এক বিন্দুতে এসে মিলে যায়। নিষ্পেষণের এ কেন্দ্রবিন্দুতে এসে তাঁদের মিলে যেতে বাধ্য করেছে কট্টরপন্থি এলিট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। ভারতে মুসলমানদের দুর্দশার গল্প শোনার আগে, চলুন দেখে আসি দলিতদের ওপর কীভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করে এদেরই ধর্মীয় ভাই-বোনেরা। ধর্মের বড় বড় কথা এখানে মানবতার কাজে আসে না।
বছর পাঁচেক আগে দলিতদের দুর্দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল লন্ডন-ভিত্তিক পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। সে প্রতিবেদন থেকে আমরা ডক্টর বিনোদ শঙ্কর নামের এক ভদ্রলোকের অভিজ্ঞতা জানতে পারি। ডক্টর বিনোদ একজন উচ্চশিক্ষিত ভারতীয়। মরুভূমির রাজ্য রাজস্থানের এক দোকানে গেছেন চা খেতে। চা দেয়ার আগে দোকানি জিজ্ঞেস করল, আপনি কোন জাতের? উত্তরে বললেন, ‘আমি দলিত’। দোকানি উত্তর দিলেন ‘যাওয়ার আগে কাপ ধুয়ে দিয়ে যাও’।
সারাজীবন খোটা খেয়ে বড় হওয়া বিনোদ বাবুর এতে খুব রাগ হলো। তিনি চায়ের কাপ ছুড়ে মারলেন দেয়ালে। চা এবং ভেঙে ফেলা কাপের দাম দোকানির সামনে ধাপ করে রেখে রাগে, দুঃখে, অভিমানে বের হয়ে এলেন। বিবিসির সাংবাদিককে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় শঙ্কর বাবুকে বেশ রাগান্বিত দেখাচ্ছিল। ‘আমি পিএইচডি করেছি। আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এখনো আমি অস্পৃশ্য, অচ্ছুত। আমাকে ছুঁলে তাদের শরীর অপবিত্র হয়ে যায়’, অসহায় শঙ্কর বাবুর মন্তব্য।
তিনি আরও বলেন, ‘ ভারতকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র বলা হলেও এটি আসলে ‘বৈষম্য-নির্ভর’ একটি ব্যবস্থা’। অথচ উচ্চ বর্ণের আধিপত্যশীল রাষ্ট্র পরিচালনাকারীগণ বহির্বিশ্বকে বোঝাতে চান যে, জাত-পাতের বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক বিষয়।
ডক্টর শঙ্কর নিজে গবেষণা করে দেখিয়েছেন, ভারতে মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ শুধুমাত্র দলিত সম্প্রদায়ের বলে এখনো অচ্ছুত হিসেবে বিবেচিত হয়। সমাজের বেশিরভাগ সুযোগ-সুবিধা থেকে এরা বঞ্চিত।
ভারতের সংবিধানের ১৭নং ধারায় অস্পৃশ্যতার নির্মম সামাজিক চর্চা নিষিদ্ধ করা হলেও উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এই ধারাকে থোরাই কেয়ার করে। একবিংশ শতাব্দীতেও চলমান এই অসভ্যতার বিলোপ সাধনে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে ‘ভিডিও ভলান্টিয়ার’ নামের একটি সচেতন গ্রুপ। এরা পুরো ভারত থেকে সংগ্রহ করা অত্যাচার-নির্যাতনের ভিডিও ডকুমেন্ট দেখিয়ে সামাজিক সচেতনতা ও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির কাজ করে।
এই ভিডিওগুলোর দুয়েকটার বর্ণনা দেয়া যাক। একজন দলিত অভিযোগ করছেন, নাপিত তাঁর চুল কাটছে না, কারণ তাঁর জাত ‘ভালো’ না। আরেকটা ভিডিও থেকে জানা গেল, দলিতদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে ক্লাসে বসতে পারছে না। ক্লাসরুমে এক বেঞ্চে বসে টিফিন খেতে পারছে না। আরেক ভিডিওতে দেখা গেল, এক দলিত নারী মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি আনতে গ্রামের বাইরে যায়, কারণ গ্রামবাসীরা তাঁকে গ্রামের সরকারি টিউবওয়েল থেকে পানি নিতে দেয় না; কারণ সে টিউবওয়েল স্পর্শ করলে সে পানি আর পান করা যাবে না।
অমিত নামের আরেক দলিত দুঃখ করে বিবিসিকে বলেন, ‘ভগবান কি আমাদের কপালে সিল মেরে পাঠান যে আমরা দলিত? না হলে আমাদের দুঃখ কমে না কেন’? ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার একটি গ্রামে বসবাস করেন অমিত। রাজ্যের প্রধান শহর থেকে তাঁর গ্রামে যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। এখানে দলিতরা মন্দিরে কিংবা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। বিষাদভরা গলায় অমিত জানালেন, এখনো তাদের কমিউনিটির লোকজনকে কারণে-অকারণে গাছের সাথে বেঁধে পেটানো হয়। কিন্তু পুলিশ কিছু করে না, কারণ পুলিশের মধ্যে কোনো দলিত নেই।
এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি থেকে আশু উত্তরণ সম্ভব নয় জেনেও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলিত সম্প্রদায়ের মুরুব্বি ও সচেতন মহল। দলিতদের মধ্যে অধিকারবোধ আগের যেকোনো সময়ের চাইতে প্রবল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে এসেছে দলিত লোকজন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দলিত সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছে।
অমিত জানালেন, ‘জাত-পাতের দুষ্ট চক্র থেকে খুব কম দলিত বের হয়ে আসতে পারে। ফলে জীবনযাত্রার মান কখনো উন্নত হয় না আমাদের। যেমন ধরুন অনেক কষ্ট একজন দলিত যদি গরু কিনতে সক্ষমও হয়, তাহলেও খুব বেশি লাভ হবে না, কারণ বাজারে এই গরুর দুধ নিয়ে গেলে কেউ কিনবে না’।
দলিতদের উপর যুগ যুগ ধরে চলেছে অত্যাচার, নির্যাতন। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন উত্তর প্রদেশের ফুলন দেবী। বলিউডে এ নিয়ে সিনেমা হয়েছে। ঠাকুরদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে নিজের বাহিনী গঠন করে এর নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন ফুলন দেবী। ফুলন দেবী তাই সাধারণ নির্যাতিত মানুষের কাছের মানুষ; কিন্তু উচ্চবর্ণের ইতিহাস তাঁকে প্রচার করেছে ডাকাতদের রাণী হিসেবে। ১৯৬৮ সালে তামিল নাডুর কিলভেনমানিতে একদল দলিতকে হত্যা করা হয়। এদের অপরাধ ছিল, শ্রমের বিনিময়ে এরা ন্যায্য পারিশ্রমিক চাচ্ছিল। দলিত হত্যার এমন নজির বহু আছে ভারতে। সাম্প্রতিককালেও দলিত দমনের অনেকগুলো ঘটনা আমরা জেনেছি। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দলিতরা কখনো কখনো হাজারে হাজারে রাস্তায় নেমে আসে।
উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে দলিতরা উপায় না দেখে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। আরবের ইসলাম এ অঞ্চলে আসার পর থেকে দলিত সম্প্রদায় থেকে দলে দলে লোক ধর্মান্তরিত হয়। ফলে বলা যায়, দলিত সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ এ অঞ্চলে মুসলমান সমাজের পূর্ব-পুরুষ। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। প্রতিবেশী ভারতে এখনো দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার, নির্যাতন এবং বৈষম্য থেকে নিজেদের বাঁচাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে চলেছেন। ২০১৬ সালের মার্চ ১৬ তারিখে দি টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট (http://timesofindia.indiatimes.com/…/articlesh…/51419977.cms) থেকে জানা যায়, পাঁচ বছরে গুজরাট প্রাদেশিক সরকার বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছ থেকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য এক হাজার ৮৩৮টি দরখাস্ত গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে এক হাজার ৭৩৫টি, অর্থাৎ ৯৪.৪ শতাংশ দরখাস্ত জমা দিয়েছে ‘হিন্দু’ ধর্মের লোকজন।
জন্মসূত্রে এরা ‘হিন্দু’ হলেও নানা সামাজিক, রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এরা আর নিজের ধর্মে থাকতে চাচ্ছে না। বলাবাহুল্য যে, ধর্মান্তরিত হতে ইচ্ছুক এই মানুষগুলো দলিত সম্প্রদায়ের এবং তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। বেশিরভাগ আবেদনই জমা পড়েছে, সুরাট, রাজকোট, পরবান্দার, আহমেদাবাদ, জামনগর এবং জুনাগড় থেকে। তবে গুজরাটের দলিত সংগঠন এর সভাপতি জয়ন্ত মানকান্দিয়া টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, সরকার যদি বলে থাকে যে ধর্মান্তরিত হতে শুধুমাত্র ১ হাজার ৭শ ৩৫টি দরখাস্ত জমা পড়েছে, তাহলে এটা পরিষ্কার যে সরকার সব দরখাস্ত তাদের রেকর্ডে নেয়নি।
১৯৫০ সালে সাংবিধানিকভাবে ভারতে জাত-পাতের সামাজিক ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবে এখনো ভারতে ব্রাহ্মণ (পুরোহিত এবং উচ্চজাত), ক্ষত্রিয় (যোদ্ধা), বৈশ্য (ব্যবসায়ী) এবং শূদ্র (খেটে-খাওয়া মানুষ) ইত্যাদি জাতে মানুষকে ভাগ করে বৈষম্য করা হয়। জাত-পাতের সমস্যা এতটাই প্রকট যে, এক জাতের হিন্দু আরেক জাতের কাউকে বিয়ে করলে বা তাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক হলে খুন পর্যন্ত করা হয় বাংলাদেশের যুগান্তর পত্রিকায় ২০১৭ সালের ২৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা দেখতে পাই- ‘ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের দুটি গ্রামে মন্দিরে প্রবেশ করার অনুমতি না মেলায় ক্ষুব্ধ ২৫০টি দলিত পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্যদিকে ভারতজুড়ে মুসলমানদের উপর আগের যেকোনো সময়ের চাইতে নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএস ও শিবসেনার অত্যাচার বর্ণনার বাইরে চলে গেছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী উগ্র রাজনৈতিক দলই রয়েছে কমপক্ষে ৩৭টি। এর মধ্যে ২৭টি সর্বভারতীয় ভিত্তিতে এবং ১০টি আঞ্চলিক দল হিসেবে কর্মতৎপর বলে জানা গেছে।
সর্বভারতীয় হিন্দু ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে, অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভা, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি, অখিল ভারতীয় হিন্দু শক্তি দল, অখিল ভারতীয় জন সংঘ, অখিল ভারতীয় রাম রাজ্য পরিষদ, অখিল ভারতীয় শিবসেনা রাষ্ট্রবাদী, অখন্ড হিন্দুস্তান মোর্চা, আপনা হিন্দু রামভক্ত পার্টি, আর্যসভা, ভারতীয় হিন্দু সেনা, ভারতীয় জনশক্তি, ভারতীয় স্বদেশী সংঘ, হিন্দু একতা আন্দোলন পার্টি, হিন্দু প্রজা পার্টি, হিন্দু সমাজ পার্টি, হিন্দু শিবসেনা, হিন্দু স্বরাজ সংগঠন, রাষ্ট্রীয় হিন্দু সংগঠন, রাষ্ট্রীয় হিন্দু মোর্চা, রাম রাজ্য মার্গ, রাম সেনা রাষ্ট্রবাদী, সমরাথ ভারত, শিব রাজ্য পার্টি, শিবসেনা প্রভৃতি।
অন্যদিকে, আঞ্চলিক হিন্দুবাদী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, অসম ভারতীয় জনতা পার্টি, নিখিল মনিপুরি হিন্দু মহাসভা, হিন্দু মুন্নানি (তামিলনাড়ু), হিন্দু মাক্কাল কাচ্চি (তামিলনাড়ু), জনতা পার্টি (দক্ষিণ ভারত ও মহারাষ্ট্র), তামিলনাড়ু হিন্দু ভেলালার ইয়থ কাজাঘাম, রাম সেনা (কর্তাটক), ভারতীয় জন পাকসাম (কেরালা), সনাতন প্রভাত (মহারাষ্ট্র ও কেরালা), হিন্দু সংহতি (পশ্চিমবঙ্গ) প্রভৃতি।
ভারতের গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, এসব দলের আরএসএস-এর মতো কোনো কোনো দলের আধাসামরিক বাহিনীর মতো বাহিনী রয়েছে। এসব দল প্রধানতঃ ভারতকে একটি হিন্দু দেশে পরিণত করতে কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে আন্দোলনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে পরিচয় না দিলেও তারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাদের পেছনে শক্তি যোগায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস), শিবসেনা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি)।
বাংলা দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ‘ভারতে মুসলমান ও দলিতদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবার সরব হয়েছেন সে দেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে লেখা এ খোলা চিঠিতে ভারতজুড়ে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করে বলেন, প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায় ও দলিত জনগোষ্ঠী এ নির্যাতনের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ভারতের তিন বাহিনীর অন্তত ১১৪ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন’।
গরুর মাংস ভক্ষণকে কেন্দ্র করে ভারতের নানা স্থানে মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনা বহুগুণে বেড়ে গেছে। অনেক রাজ্যে গরু কোরবানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ, ভারত পৃথিবীর অন্যতম গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ। এই গোমাংস রপ্তানির সাথে জড়িয়ে আছেন সেদেশের অনেক উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্যবসায়ী। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মানদণ্ডে ভারত এখন বিশ্বের চার নম্বর সহিংস রাষ্ট্র।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ভারতের বিজেপি, আরএসএস ও শিবসেনা টাইপের সংগঠন বাংলাদেশেও কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। মাস কয়েক আগে, বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলের অনানুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ দেখেছিলাম আমরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইবে । জাতীয় হিন্দু মহাজোট নামের একটি সংগঠন রয়েছে, যাদের কাজ হল বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা। এর আগে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন এবং সাংবাদিক স্বদেশ রায় এসব হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠনের বাংলাদেশ-বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে লিখে সবাইকে সতর্ক করেছেন। আসামের মুসলমানদেরকে ‘বাংলাদেশি’ বলে আখ্যা দিয়ে ভারতছাড়া করার চেষ্টা বিজেপির বহুদিনের। এদেশের হিন্দুদের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে নিজেদের ভোট ব্যাংক বাড়ানো আর সেদেশের মুসলমানদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এখানেই বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। না হলে বাংলাদেশের ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এর সুযোগ নিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠক মন্তব্য
ভারতেও জামাতে ইসলাম টাইপের পার্টি আছে। সে বিষয়ে ঐ দেশের সরকারকে সতর্ক হতেহবে।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন