মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
রাজধানী ঢাকার একটি রাত। তখন রাত ৯টা। শিল্পকলা একাডেমিতে আড্ডা শেষে বাসায় ফিরছিলাম। ফাঁকা রাস্তা ও পর্যাপ্ত যানবাহন থাকা সত্ত্বেও হেঁটে ফিরছিলাম, কারণ রাতে হাঁটলে ঘুমটা ভালো হবে এ প্রত্যাশায়।
তখন ফুটপাতে চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আমিসহ মাত্র দু-চারজন। রমনা পার্কের দেয়াল ধরে কাঁটাবনের দিকে হেঁটে চলছি। একপাশে রমনা পার্ক আবার অন্যপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
শীতল আবহাওয়ার মাঝে হাঁটতেও খুব আরাম অনুভব করছিলাম। রমনার দেয়ালঘেঁষে আবার ছোট ছোট কতগুলো তাঁবু টানানো আছে। ভেবেছিলাম এগুলো গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষরা এ তাঁবুগুলোতে রাত্রিযাপন করে।
সেগুলো দেখে তখন মানুষগুলোর জন্য হৃদয়ের মাঝে খুব অনুকম্পা ও সমবেদনা জোয়ার উঠেছিল। কিন্তু আর একটু কাছাকাছি যাওয়ার পরই দেখতে পেলাম আসল চিত্র। জানতে পারলাম তাঁবু টানানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য।
দেখলাম একটি তাঁবুর কাছে আসতেই দেখি একটি মেয়েলোক বসে আছে। কি যেন মেখে পুরো মুখমণ্ডল ধবধবে সাদা করে রেখেছে। কপালে লাল রঙের একটি টিপ। রাস্তার বাসিন্দা হিসেবে শরীরের পোশাকও খুব জমকালো।
অন্যান্য ছিন্নমূল বাসিন্দাদের চেয়ে একটু উন্নত পরিবেশ। তার একদম সামনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে বলল,
আসেন, আসেন, ভেতরে আসেন-
প্রশ্ন করলাম কেন?
এরপরই মেয়েলোকটি একদম নির্বাক হয়ে গেল। চোখ দুটো নিচের দিকে ফিরিয়ে নিল। এরপর আমিও আবার হেঁটে চললাম, আর কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করিনি।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এরা হলো পতিতা। রাতের আঁধারে দেহ বিলিয়ে দেয়াই এদের কাজ। যৌনপিপাসায় উত্তপ্ত পুরুষরা এদের দেহ উপভোগ করে, আর বিনিময়ে তারা পায় অর্থ।
এতেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। আমাকে মেয়েলোকটি ডেকেছিল একই কারণে। যাতে আমি তার সঙ্গে যৌনময় কিছু সময় ব্যয় করে তার বিনিময়ে তাকে কিছু অর্থ প্রদান করি।
লেনদেনের ব্যপারটা যাই হোক, কে কাকে পেমেন্ট করে সেটি পরের কথা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত একজন ছেলে যদি কোনো মেয়েকে যৌনময় সময় কাটানোর জন্য আহ্বান করে তখন তা কেমন অপরাধ সেটি আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
পুলিশ আসার আগে ব্যাপারটি যদি সাধারণ জনতা জেনে যায় তাহলে সে ছেলেকে তাৎক্ষণিক একটি গণধোলাই হজম করে নিতে হবে।
ধোলাইয়ের ওজন যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে তাকে পৃথিবী থেকেই হয়তো বিদায় নিতে হবে। আর যদি প্রাণে বেঁচে যায় তাহলে তো আরও কঠিন গ্লানি তাকে টানতে হবে। মামলা, রিমান্ড, জেল, জরিমানা আরো কত কী। এ হলো বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও রাষ্ট্রীয় আইন।
আর পুরুষের ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়ার অর্থ হলো তাদের ব্যক্তিত্ব, সম্ভ্রম ও সম্মানের কোনো পাহারাদার নেই। মেয়েরা পুরুষদের যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করতে কোনো বাধা নেই। ব্যাপারটি হাস্যকর হলেও কিন্তু চরম সত্য।
লম্পট ও কুলাঙ্গার শ্রেণির ব্যক্তিত্বহীন যেমন কিছু পুরুষ আছে, নারীদের মাঝেও তেমন দেহ ব্যবসায়ী পতিতা, কুলাঙ্গার ও ব্যক্তিত্বহীন কিছু নারী আছে।
সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের যেমন নিরাপত্তা আছে, পুরুষদের জন্যও তেমন নিরাপত্তার প্রয়োজন। কিন্তু নারী তা বিশ্বাস করতে রাজি নয়।
তাদের ভাষ্য শুধুমাত্র পুরুষরা তাদের ধর্ষণ করে, নির্যাতন করে। তাদের কেউ পুরুষদের কিছুই করে না। অথচ তারা তারা যে দেহ বিলিয়ে পুরুষদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে তার কোনো পাত্তা নেই। সেখানে তারা যৌনক্ষুদাও নিবারণ করে, অর্থও পায়, দুটোই তাদের লাভ।
রাষ্ট্রে যেমন নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু আইন আছে, তেমনটি পুরুষদের জন্যও প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার সংরক্ষণের জন্য অনেক কিছু থাকলেও পুরুষদের জন্য কিছুই নেই।
আবার অধিকার সংরক্ষণে নারীদের জন্য সামাজে বিশেষভাবেও বহু উদ্যোগ আছে। আছে কত আন্দোলন, সংগঠন, ঐক্য, ইত্যাদি। সেখান থেকেও তাদের অধিকার আদায়ের হুঙ্কার তোলা হয় প্রতিনিয়ত। সব সময় তাদের অধিকারের সমুদ্র, নদী সব যেন শুকনোই থাকে।
লেখক: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন