বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের কেউই কোথাও বলেনি মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা চলছে, জাতিগত নিধন চলছে।
শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক আইনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা : সমাধান ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, যে সরকার অনির্বাচিত, যে সরকার ক্ষমতা জোর করে দখল করেছে এবং আবার জবর-দখলের পাঁয়তারা করছে, যে সরকার দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যা করছে, মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না, এ সমস্যা সমাধানে সে সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা জবরদখলকারী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ক্ষমতাসীনদের নৈতিক কোনো অবস্থান নেই। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে কফি আনানের সুপারিশে কি আছে সরকারের কেউ কি সেটা দেখেছেন? দেখে থাকলে তো বুঝা উচিত কমিটিতে কারা আছে? কফি আনানের ৯ সদস্যের কমিটিতে ছয়জন মিয়ানমারের। সুপারিশে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকই বলা হয়নি। তা হলে তারা কিভাবে সমস্যার সমাধানের কথা বলবেন। সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
আমির খসরু বলেন, শুরুতে সরকার রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী ও ইসলামী জঙ্গি অভিহিত করে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একযোগে অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরবর্তীতে দেশের জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের বিষয়ে সোচ্চার হলে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের আশায় সরকার লোক দেখানো সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে মিয়ানমার গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনে লিপ্ত। সেখানে প্রথমেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলে প্রমাণের চেষ্টা চলে। এখানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। মিয়ানমার গণহত্যায় নেমেছে। আপনি তাদের সন্ত্রাসী বলছেন।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশকে টার্গেট করেই এ কাজ শুরু করেছে। আমাদের সরকার তার কিছুই বুঝেনি। এভাবে রোহিঙ্গা সমাধানের সুযোগ শুরুতেই নষ্ট করে সরকার।
আমীর খসরু বলেন, যখন সারাবিশ্ব জেগে উঠলো, তখন বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক সুযোগ নিতে সরকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়। এটি মানবতার কারণে নয়, পুরস্কারের আশায়। শুরু থেকে কূটনৈতিক সমাধানের পথে গেলে সমাধান করা যেতো।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার হঠাৎ করে গণহত্যা শুরু করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এটি জাতিগত নির্মূল। জাতিগত নির্মূল যেখানে করা হয় সেখানে বিশাল কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা হয়। অথচ আমাদের গোয়েন্দারা তা আঁচ করতে পারল না নাকি সরকারের তৎপরতা নেই।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রাজনীতি নয়। বিএনপির অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। কিন্ত সরকার তা আমলে নেয়নি। আমাদের এখন কোনো বন্ধু নেই। আমরা এখন বন্ধুহীন অবস্থায় আছি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদেরও জাতীয় ঐক্য, আইনের শাসন, গণতন্ত্র দরকার। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক অবস্থানও শক্ত হবে। কিন্তু কী করতে হবে তাও সরকার বুঝতে পারছে না।
আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আবদুল্লাহিল মাসুদের পরিচালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. এস.এম হাসান তালুকদার, বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মো. লুৎফর রহমান, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. মো. এমতাজ হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল আহসান, প্রফেসর ফিরোজা বেগম, বিএনপি নেতা মিহির, আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, আবদুল হাকীম প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন