একাদশ সংসদ নির্বাচন: সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, অন্যথায় ভোট বর্জন করে আন্দোলন
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার দু'ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন 'সহায়ক সরকারে'র অধীন বা 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি হলে নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। তবে দাবি না মেনে বর্তমান সরকারের অধীনে 'একতরফা' নির্বাচন হলে বিএনপি তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। এ লক্ষ্যে ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। অবশ্য বিগত নির্বাচনের আগেও প্রতিহতের হুমকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি তারা।
এদিকে যে কোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ বাড়ছে বিএনপির ওপর। গত নির্বাচন বর্জন যে 'ভুল' ছিল তা এখন ঐতিহাসিক সত্য। এবার প্রশাসনের ভেতরের শুভাকাগ্ধক্ষীরাও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পরামর্শ দিচ্ছে বিএনপিকে। সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে 'বিশেষ দূত' মারফত এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে দেখা-সাক্ষাৎকালে এ পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, গত নির্বাচনের ব্যর্থতা ও অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই এবার বাঁচামরার লড়াইয়ে নামবে বিএনপি। ইতিমধ্যে 'নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারে'র রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করেছে তারা। শিগগির দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পর রূপরেখার স্বপক্ষে জনমত তৈরি করতে মাঠে নামবেন তিনি। পাশাপাশি প্রভাবশালী প্রতিবেশী ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়েও লবিং-তদবির চালাবে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি; তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নয়। বিএনপির দাবি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আবারও একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে তা বর্জন করে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। বিএনপির সেই সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে কি-না- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বিএনপির বর্তমান চেহারা থাকবে না। এবার তাদের 'চেহারা বদলে' যাবে। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রশাসনের শুভাকাগ্ধক্ষীদের পরামর্শ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বিএনপি নেতারা বিশ্বাস করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো একতরফা নির্বাচন আর বাংলাদেশে সম্ভব হবে না। নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। দেশি-বিদেশি বন্ধুরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। সরকার, নির্বাচন কমিশন দেশি-বিদেশিদের বার্তা পেয়ে গেছে। একাধিক মন্ত্রীও বেশ জোর দিয়ে বলছেন, সরকার চায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিক। সব হিসাব-নিকাশ করেই সম্প্রতি খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় বিঘ্ন ঘটানো হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশিরা জোর দিচ্ছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করে তাদের রাষ্ট্রের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে দুই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, নানামুখী সমস্যা সমাধান ও জনগণের মনোভাব সম্পর্কে স্ব স্ব দেশে বার্তা পাঠিয়েছেন।
একতরফা হলে বর্জন করে প্রতিহতের প্রস্তুতি : বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান হিসেবে না রেখে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে চান তারা। এই প্রধান দাবিটি পূরণ না হলে শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান হিসেবে রেখে অন্তত নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বিএনপিকে দিয়ে জাতীয় সরকার হলেও নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। অবশ্য সরকার 'একতরফা' নির্বাচন করতে চাইলে তা বর্জন করে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন তারা। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে সব দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামতে হবে তাদের।
সূত্র জানায়, একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করতে ভেতরে-ভেতরে বেশ তৎপর বিএনপি। বিশেষ করে তৃণমূল থেকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে তারা। দলের প্রতিটি শাখায় ত্যাগী ও সাহসী এবং তরুণ নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করবে দলটি। এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে দলের নীতি-অবস্থান সময়মতো পৌঁছে দেবে হাইকমান্ড।
নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ সফরে যাবেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকালীন জোট গঠনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে হাইকমান্ডের। এ লক্ষ্যে শিগগির বাম নেতাদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, সরকার চায় না, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। এ জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারা। ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ জোটের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করবে। সমকাল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন