ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্পষ্ট করেই বলেছেন, তার দেশ সব প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো ‘ইমানদারির সঙ্গে’ মিটিয়ে ফেলার আগ্রহের কথাও জানান তিনি। গতকাল ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারে নতুন চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় কমিউনিটির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতে শুরু করে সুষমা স্বরাজ এক পর্যায়ে হিন্দিতেও কিছু কথা বলেন। যার বঙ্গানুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘ভারতের কাছে প্রতিবেশী আগে।
আর প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ সবার আগে।’ ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে ‘অসাধারণ’ পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত যে বিষয়গুলো রয়েছে, তার সমাধানে দুই পক্ষই ‘বন্ধুত্বের মেজাজে সঠিক পথে’ কাজ করছে। কোনো কোনো সমস্যা মেটাতে দুই দেশ কাজ করছে সুষমা তা স্পষ্ট না করলেও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার টেবিলে ঝুলে আছে। সুষমা বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমরা দুই দেশ মিলে সব বিষয় ইমানদারির সঙ্গে মিটিয়ে ফেলবো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তিনি আমার দাদা, আমার ভাই। আমাদের সম্মোধন দাদা-দিদি। আমাদের সম্পর্ক ভাই-বোনের। বন্ধুত্বপূর্ণ এ সম্পর্কের চেতনাতেই আলাপ-আলোচনায় আমরা স্বচ্ছতা এবং সচেতনতার সঙ্গে সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলবো বলে আশা রাখি। এ সময় তিনি সমুদ্রসীমা এবং স্থলসীমানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে দুই দেশের জনগণের পর্যায়ে সম্পর্ক বাড়াতে এ বছর ১৪ লাখ বাংলাদেশিকে ভারতের ভিসা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের চতুর্থ সভায় অংশ নিতে দুইদিনের সফরে রোববার ঢাকা আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সোমবার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পাশাপাশি ভারত সরকারের অর্থায়নের (৭১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা) ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ঢাকার বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় ৫ একর জমির উপর নতুন এ চ্যান্সেরি ভবন নির্মিত হয়েছে। নতুন চ্যান্সেরি ভবনের উদ্বোধনীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সুষমা। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর সোয়া একটার দিকে ভারতীয় বিশেষ বিমানে সুষমা ঢাকা ত্যাগ করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন