জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণ করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি ১৩ অক্টোবর সভা করে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণা করে বিধি জারির আল্টিমেটাম দেন। আজ শুক্রবার কলেজ জাতীয়করণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করে দ্রুত স্বতন্ত্র বিধিমালা প্রণয়নের দাবিতে বিভাগীয় ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এর আগে ২২ অক্টোবর সব জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, ১১ নভেম্বর ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ও ১২ নভেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
দেশে সরকারি কলেজগুলোতে বর্তমানে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আছেন ১৪ হাজার। আর নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজগুলোতে শিক্ষক আছেন ১৮ হাজার। এ দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছে। এদিকে সদ্য সরকারি হওয়ার ঘোষণা পাওয়া বেসরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকদের মর্যাদা ‘বিসিএস ক্যাডার হবে না নন-ক্যাডার হবে’-সিদ্ধান্তটি জানার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কাজ করছে বলে জানা গেছে। জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিপ্রাপ্ত কলেজগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৮৪টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য অর্থ ছাড়ের সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর এসব কলেজের সব সস্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট (দানপত্র) দলিল সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে।
জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ‘নন-ক্যাডার’ ঘোষণার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। অন্যদিকে আত্তীকৃত শিক্ষকরা ‘ক্যাডার’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দ্বন্দ্বে আট মাস আগে অর্থ মন্ত্রণালয় ২৮৪টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য অর্থ ছাড়ের সম্মতি দিলেও জাতীয়করণের সরকারি নির্দেশ (জিও) জারি করতে পারছে না মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমাদের দাবি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও শিক্ষানীতির আলোকে বিধিমালা প্রণয়ন করে নতুন সরকারি হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়া। তিনি বলেন, এর ওপর পুরো শিক্ষাখাত নির্ভর করছে। এদিক সেদিক হলেই শিক্ষা বিপর্যস্ত হবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন নিয়ে তীব্র উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির আশঙ্কা শিক্ষা ক্যাডারের সামনে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অতীতেও সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির ফলে সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চরম বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮১ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্তপূরণ করে প্রারম্ভিক, লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক, মৌখিক, স্বাস্থ্যগত ও নিরাপত্তাগত ছয়টি প্রতিযোগিতামূলক ধাপ পার হয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। একইভাবে প্রশাসন, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্যসহ ২৮টি ক্যাডারের কোনোটিতেই এই ধাপ পার না হয়ে যোগদানের সুযোগ নেই। কিন্তু গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে কলেজ জাতীয়করণের সুযোগে বেসরকারি শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে। এতে করে তাদের অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন।
নতুন সরকারিকরণ হওয়া কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, যে গতিতে সরকারিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বর্তমানে সেই গতি নেই। ফলে সরকারি হওয়ার ঘোষণা পাওয়া কলেজগুলোতে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়ে আসছে। তখন থেকেই কলেজ শিক্ষকরা ক্যাডার মর্যাদা পেয়ে আসছেন। একই প্রতিষ্ঠানে একই কাজ করা শিক্ষকরা ক্যাডার, নন-ক্যাডার থাকলে শ্রেণি বৈষম্য তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন