‘মিছা কথা কমু কেন। আমি জাতে মুচি, মানে জুতা সেলাইয়ের কাজ করি। এক সময় ব্যান্ড পার্টির দলে নিয়মিত কাজ কইরা ভালোই আয় রোজগার করতাম। কিন্তু অহন আর আগের মতো বাজানোর কাম পাওয়া যায় না, আর ট্যাহাও পাওয়া যায় কম। তাই সংসার চালাইতে মুচির কাম করি।’
কথাগুলো বলছিলেন চিত্তরঞ্জন মনি ঋষি আউলিয়া নামের এক বৃদ্ধা। পুরান ঢাকার আলুবাজারের ন্যাশনাল ব্যান্ড পার্টির দলের সদস্য তিনি। শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে ব্যান্ড পার্টি দলের হয়ে যোগদান করেছিলেন চিত্তরঞ্জন।
দুপুর আড়াইটায় মজুরি হিসেবে ৩শ’ টাকা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় প্রতিবেদকের কাছে তার নিজের দুরাবস্থার কথা জানান। বলেন, ‘এক সময় আনন্দ নিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজালেও এখন আর মন থেকে আনন্দ আসে না।’
তার কথা সঙ্গে সুর মেলান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যান্ড দলের সদস্য সেলিম, মো.সাইদ, সামিউল্লা। তারাও এক সময় শুধু বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সংসার চালালেও এখন সেলিম রিকশা চালান। সাইদের পান সিগারেটের দোকান আছে আর সামিউল্লা স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করেন।
তারা জানান, ‘এক সময় শুধুমাত্র পুরান ঢাকার কয়েকজন এ ব্যবসায় ছিলেন। তখন তাদের খুব কদর ছিল। ব্যান্ড পার্টি ভাড়া করতে আইলে মহাজন পার্টির কাছ থাইক্যা যত টাকা চাইতো পার্টি সে টাকা দিতেই রাজি হইতো। অহন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ড পার্টির দোকান আছে। তাই বেশি টাকা চাইলে পার্টি অন্যর কাছে চইল্যা যায়। এ কারণে মহাজনের ইনকাম কমছে, কপাল পুড়ছে আমাগো।’
তারা আরও বলেন, ‘আজকের সমাবেশে দুই-তিন ঘণ্টা বাজানোর জন্য মহাজন ৫ হাজার টাকা চুক্তি করছে। কিন্তু আমগো ভাগে (যন্ত্র ভেদে) কেউ ৮শ, কেউ ৫শ আবার কেউ ৩শ টাকা পেয়েছেন। বাদ্যযন্ত্র বাজানোটা এখন আর পেশা হিসেবে নেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন