সরকারি মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে একটি শক্তিশালী তেলচোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা পরিবহনের সময় জাহাজ থেকে তেল চুরি করে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জাহাজের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে কোম্পানির কর্মকর্তারা পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন এই তেল চুরি কর্মকাণ্ডে। দীর্ঘদিন ধরে সংঘটিত তেল চুরির এই টাকা চলে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালদের পকেটে। তবে শেষ পর্যন্ত র্যাবের জালে ধরা পড়েছে তেলচোর সিন্ডিকেটের সদস্য একটি জাহাজের প্রকৌশলীসহ ৫ জন। এরপরই বেরিয়ে আসে তেল চুরির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এ ঘটনায় যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তিন কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে খুঁজছে র্যাব-পুলিশ।
গত ৫ নভেম্বর খুলনার দিঘলিয়া থানার ভৈরব নদীর সেনহাটি ঘাট এলাকায় যমুনা অয়েলের তেলবাহী জাহাজ এমটি রায়দা থেকে তেল চুরির অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল। তারা হলেন এমটি রায়দা জাহাজের প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মাস্টার মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. নুরুল আফসার, টেন্ডাল মো. জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় চোরাকারবারি শেখ মোহাম্মদ সুমন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরি হওয়া সাড়ে ৮ হাজার লিটার ডিজেল উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে খুলনার দিঘলিয়া থানায় একটি মামলা করে।
মামলার এজাহার ও তদন্ত সূত্রে জানাযায়, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে যমুনা অয়েল কোম্পানির তেল নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির খুলনা ডিপোতে জমা দেওয়ার জন্য রওনা হয় এমটি রায়দা। তেল লোড দেওয়ার সময় যমুনা অয়েলের চট্টগ্রাম ডিপোর টার্মিনাল ম্যানেজার মাসুদ, ডিউটি অফিসার সমীর বাবু ও বাল্ক অফিসার নন্দী বাবুর যোগসাজশে চালানপত্রের অতিরিক্ত তেল জাহাজটিতে লোড করে। এই তিন কর্মকর্তা সরাসরি যুক্ত তেল কালোবাজারি সিন্ডিকেটে। এ ছাড়াও যমুনা অয়েলের বেশ কয়েক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ ছাড়া এমটি রায়দা জাহাজের সুপারভাইজার আবুল হাসনাত টিপুও সরাসরি যুক্ত এ সিন্ডিকেটে।
র্যাবের অভিযানের পরদিন গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় জাহাজের ৬৫টি সিলের মধ্যে পি-১ ও এস-১ ডিপ হোলের দুটিতে সিল খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। এখান থেকেই মূলত তেল চুরি করা হয়।
র্যাব জানায়, সরকারি তেল চুরির জন্য গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যমুনা অয়েলের চট্টগ্রাম ডিপোতে রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বেশ কিছু সদস্য। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব কিছু জানাতে চায় না সংস্থাটি। খুলনায় এই চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেশ কয়েকজন চোরাকারবারি। তারা সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন তেল চুরি ও বিকিকিনির নেটওয়ার্ক।
সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েলের মতো তরল পদার্থ খোলা নৌকায় করে চুরি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এতে একদিকে যেমন তেলের মান কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব ৬-এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে খুলনা পর্যন্ত পরিবহনের সময় তেল চুরির একটি বড় চক্র খুলনায় গড়ে উঠেছে। এই চুরি কেন্দ্র করে মস্তানি বা অপরাধের একটা সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে রূপসাপারে। আমরা যে মামলাটা করেছি সেটা সঠিকভাবে তদন্ত করলে এর সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু বের হয়ে আসবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন