বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই। এমন কোনো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না। তবে আইনে বলা আছে, সরকার ডিজি নিয়োগ দেবে। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের এ পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও অবস্থা একই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজি নিয়োগের জন্য একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে ড. খলীকুজ্জমানকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- গভর্নর ফজলে কবির, বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোকুলচাঁদ দাস। এ কমিটির সুপারিশে বর্তমান ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান নিয়োগ পেয়েছেন।
এ নিয়োগ নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ যুগান্তরকে বলেন, এক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকলে অনেক কিছু এড়ানো যায়। তবে সরকার চাইলে সার্চ কমিটির কার্যক্রমগুলোই একটি নীতিমালার রূপরেখা দাঁড় করাতে পারে। আর নীতিমালা থাকলে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে সেটি ভালো হয়।
জানা গেছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আরেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা রাজী হাসানের নিয়োগ মেয়াদও শেষ হচ্ছে নতুন বছরের মাঝামাঝি। ডিজির আরও একটি পদ খালি পড়ে আছে, কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগে অনেকবার নীতিমালার কথা বলা হলেও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে কোনো নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এ বলা আছে, ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেবে সরকার।
জানতে চাইলে ডিজি নিয়োগে গঠিত সাবেক সার্চ কমিটির সদস্য ড. জায়েদ বখত সোমবার যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে অবশ্যই একটি নীতিমালা প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা
ভেবে দেখতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক নির্বাহী পরিচালক বলেন, এটা দুঃখজনক। স্বাধীনতার এত বছরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। নীতিমালা না থাকায় এ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটা ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের জন্য খারাপ সংবাদ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে তিনজন ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আগ পর্যন্ত চারজন ছিলেন। আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। একই দিনে এবং একই ইস্যুতে দু’জন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানার চুক্তি বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
ওই সময় নতুন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত সার্চ কমিটি তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করে। কিন্তু দু’জনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ থাকায় প্যানেলটি বাতিল করা হয়। পরে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি আবার পাঁচজনের প্যানেল তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের মার্চে প্রথম আবেদন আহ্বান করা হয়। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১ জুন পর্যন্ত যাদের বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করবে না তারা আবেদন করতে পারবেন। সে অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে সার্চ কমিটি তিনজনের নাম সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন করেনি।
এরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তিতে ৬০ বছরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হয়, বিশেষ কাউকে নিয়োগের জন্যই বয়সসীমা সংশোধন করা হয়েছে। পরে সার্চ কমিটির প্রস্তাব অনুসারে ডেপুটি গভর্নর পদে এসএম মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন