দেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শুক্রবার এক শোকবার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘মরহুম বারী সিদ্দিকী লোকগান ও আধ্যাত্মিক গানের একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। তার গান এদেশের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল। তার কণ্ঠে মরমী গানে সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ মোহাবিষ্ট থাকতো।’
তিনি বলেন, ‘বারী সিদ্দিকীর মৃত্যু সঙ্গীতানুরাগী মানুষের জন্য অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও বেদনার। একাধারে সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক হিসেবে মরহুম বারী সিদ্দিকী এদেশের কীর্তিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। দেশের এই বরেণ্য সংগীত সাধক তার অক্লান্ত অধ্যাবসায় দ্বারা দেশের লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গানের জগতকে করেছিলেন সমৃদ্ধ।’
`সঙ্গীতাকাশে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক। তার মৃত্যুতে দেশ হারালো অসাধারণ একজন গুণী শিল্পীকে, যার অভাব সহজে পূরণ হবার নয়। সংগীতে তার অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে,’ যোগ করেন তিনি।
বারী সিদ্দিকী বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি শোকাহত পরিবারের সদস্য, গুণগ্রাহী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।
অপর এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মরহুম কণ্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, গুণগ্রাহী, ভক্ত-অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকী।
১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে হার্ট অ্যাটাক করলে অচেতন অবস্থায় প্রথমে তাকে ঝিগাতলার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী। তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করেছেন। তার গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’ প্রভৃতি গানের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলায় এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।
সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
দীর্ঘদিন সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর। এই ছবিতে তার গাওয়া ছয়টি গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন