ডা. ইমরান এইচ সরকার। বাংলাদেশের একটি অধ্যায়কে কাঁপিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারিগর। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি। দেখা হয়ে গেছে মুদ্রার দু’পীঠ। ইমরানের কাছের সহযোদ্ধারা ছেড়ে গেছেন। যে ক্ষমতাসীনরা তাকে মাথায় তুলে নেচেছিলেন, এখনই তারাই ছুঁড়ে ফেলেছেন। একাধিকবার ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হয়েছেন। হামলা-মামলা নিয়ে দৌঁড়াচ্ছেন আদালতে। মাঝে কিছুটা রক্ষা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ে বিয়ে করায়।
.
এখন আর ইমরানকে আগের মতো কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না, পরিবার নিয়ে একান্তই একাকী সময় কাটাচ্ছেন বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাতিল হয়।
এরপরই রাজধানীর শাহবাগ ঘিরে নজিরবিহীন যে তারুণ্যের বিপ্লব ঘটে, তারই পুরোধা ছিলেন ডা. ইমরান এইচ সরকার। স্বতঃস্ফূর্ত লাখো জনস্রোতের মধ্যমণি ছিলেন তিনি। আব্দুল কাদের মোল্লা ইস্যুতে জাতীয় ‘হিরো’ হয়ে উঠা সে সময়ের প্ল্যাটফর্ম গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হন ইমরান।
কিন্তু, এরপর থেকেই একের পর এক সামালোচনা, ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল নেতৃত্ব, নিজ সংগঠনের একাংশ থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ সরকারের অনুকম্পায় চলার অভিযোগ, বিয়ে এবং বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বিতর্কিত হওয়ার মাধ্যমে ইমরান যেন অনেকটাই হারিয়ে গেছেন।
সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়ে, বিয়ের পর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের হাতে একাধিকবার পিটুনি খাওয়া এবং মামলা-গ্রেফতারি পরোয়ানার পর অনেকটাই চুপচাপ ইমরান। ধানমিন্ডর বাসায় স্ত্রী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে নিরিবিলি দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
আপাতত কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি নেই বলে ইমরান এইচ সরকার পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আন্দোলন-সংগ্রামের এক সময়ের সহযোদ্ধারাও অনেকে সরে গেছেন। কেউ কেউ নিজ নিজ পেশা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে বাধ্য হয়েই একাকী সময় কাটাতে হয় বলে জানান গণজাগরণ মঞ্চের এই মুখপাত্র।
গতবছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে হঠাৎ করে তিন বছরের প্রেমের ইতি টানেন ইমরান এইচ সরকার। বিয়ে করেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ে নন্দিতা নাদিয়া ইসলামকে।
এরপর তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। আদালত প্রাঙ্গণে তাকে লক্ষ্য করে পচা ডিম ও জুতা মারা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইমরান এইচ সরকারকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর স্লোগান’ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
অবশ্য বেশ আগেই গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে গেছে। এক অংশের নেতৃত্বে আছেন ইমরান। অন্য অংশের নেতৃত্বে কামাল পাশা চৌধুরী। সঙ্গ ছাড়ার সময় কামাল পাশা ইমরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন।
এত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইমরান এইচ সরকার কেমন আছেন? কি করে দিন কাটাচ্ছেন? পরিবর্তন ডটকমকে তিনি জানান, ‘আমার স্ত্রীর শরীর খারাপ। আপাতত এই নিয়েই একটু ব্যস্ত সময় কাটছে।’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ‘নানা সমস্যাতো লেগেই আছে। মাঝে যে ঝামেলাটা গেল। পরেতো জামিন নিয়েছি। কিন্তু, দেশের খারাপ পরিস্থিতি কাটেনি। কথা বললেই সমস্যা হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছি। শুধু আমি না, যারাই একটু সত্যের পক্ষে কথা বলছেন, তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন।’
তিনি মনে করেন, ‘দেশে প্রতিদিন নানা ঝামেলা হচ্ছে, নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে, এগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ। সবারই সোচ্চার হওয়া দরকার।’
কিন্তু, বাস্তবতা অনেক কঠিন দাবি করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘দেখি আমি আমার পারিবারিক ঝামেলাটা একটু শেষ করে নেই। তারপর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সময় দেওয়ার চেষ্টা করব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন