সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামালের মৃত্যুর পর বিএনপির তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়েনি। দলীয় কার্যালয়ের সামনেও তার জানাযা হয়নি। বায়তুল মোকাররমের জানাযাও নেতাকর্মীদের অংশ গ্রহণও তেমন ছিল না। সবমিলেই বলা যায় কামাল অনেকটাই উপেক্ষিত হয়েছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর দলের তৎরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজন করা হয়েছিল জানাযা। দলের পক্ষ থেকেও শোক ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন মরহুম কোকোর জানাযায় যে ঢল ছিল তা নিকট অতীতে বিরল। কিন্তু শুক্রবার তা লক্ষ্য করা যায়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকে দেখা গেলেও বিএনপির অনেক নেতাই কামালের জানাযায় অংশ নেননি। কর্মী-সমর্থকদের অংশ গ্রহণও ছিল খুবই নগণ্য। এমন কী জিয়ার ভাইয়ের নাম উল্লেখ করে বায়তুল মোকাররমে জুমার পর মোনাজাত হয়নি। এছাড়া পরিবারকে সমবেদনা জানাতেও যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এমনটি কেন হলো, তা অনুসন্ধানে বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন ‘কামাল শহীদ জিয়ার ভাই হলেও তিনি দলের ভেতরে তাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা, শেষ জীবনে তার ভূমিকা সন্দেহজনক ছিল। ফলে তার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতেও অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন।’
অপর এক নেতা বলেন, ২০১৫ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল। ওই সময় তাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ঝড় উঠেছিল। বিএনপির নেতৃত্বকে নিয়ে তার কিছু বক্তব্য দলের নেতাকর্মীদের আহত করেছিল। ফলে তার জানাযায় অংশ গ্রহণেও নেতাকর্মীদের তেমন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি।
যুবদলের এক নেতা বলেন, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর আহমেদ কামালের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ঘিরে অনেকে বলছিলেন মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল রাজনীতিতে আসছেন, আবার অনেকে বলছিলেন সরকারের ইন্ধনে পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন কামাল। এরকম অনেক কিছুই তখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ নিয়ে তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল বিএনপি।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর জিয়াউর রহমানসহ তার পরিবারের মৃত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বিপন্ন গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং দোয়া -মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল।
ওই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন কামাল। তিনি রাজনীতি আসছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, রাজনীতিতে আসলে তিনি সবাইকে জানিয়েই আসবেন।
তিনি নিজেই ওই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের অয়োজন করেন বলেও জানান তিনি।
আহমেদ কামাল বলেন, এ অনুষ্ঠানটা একান্তই আমাদের পারিবারিক মিলাদ মাহফিল। এটাকে অন্যভাবে না দেখার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। তবে যদি কোনো দিন রাজনীতিতে আসি, আপনাদের সবাইকে জানিয়ে আসব।
আহমেদ কামাল আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশে যে গণতন্ত্রের কথা বলছে, এটা গণতন্ত্র নয়। এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। এ নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের মঙ্গলের জন্য সঠিক ও সুস্থ ধারার রাজনীতি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এই মিলাদকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছিল। মিলাদে শতাধিক মানুষ উপস্থিত হন। জিয়াউর রহমানের পরিবারের (পৈতৃক দিক থেকে) এটাই এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ ছিল। তবে এখানে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
সেই আহমেদ কামাল হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, আহমেদ কামাল রাজধানীর বাসাবোয় নিজ বাড়িতে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহমেদ কামাল পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান। তিনি বাসাবোর একটি বাসায় একা বসবাস করতেন। আহমেদ কামাল ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই ও খালেদা জিয়ার দেবর। তারা ছিলেন পাঁচ ভাই।
দেবরের মৃত্যুতে খালেদা জিয়ার গভীর শোক
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামালের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘মরহুম আহমেদ কামাল পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিনয়ী, সদালাপি ও কর্মনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। তিনি পেশাগত জীবনে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজসেবার নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যেও তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। আমি মরহুম আহমেদ কামালের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি।’
অপর এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আহমেদ কামালের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ প্রকাশ করে বলেন, ‘মরহুম আহমেদ কামাল সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ছিলেন। বিনয়, নম্রতা ও সৌজন্যবোধ ছিল তার স্বভাবজাত।’
বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুম আহমেদ কামালের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে। এদিকে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মরহুম আহমেদ কামালের জানাজা শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
প্রসঙ্গত, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কামালাই পারিবারিকভাবে একটি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আলোচনায় এসেছিলেন। ওই সময় সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন