ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না আক্তার হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত? কেন তাকে হত্যা করেছে? পুলিশি তদন্তে তা বেরিয়ে এসেছে। তাদের গ্রেপ্তারে ‘সিগন্যাল’-এর অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। ওই সূত্র জানিয়েছে- ঘটনার ৩/৪ দিন আগে স্বপ্নার সঙ্গে বিশেষ এক জায়গায় তুমুল বাকবিতণ্ডা হয় একজনের। এরপরই এলাকায় এসে স্বপ্না তার জীবন ঝুঁকির কথা জানিয়েছিল। ঘটনার আগে হঠাৎ করেই ওই ব্যক্তিটির এলাকায় আসার তথ্য পায় পুলিশ। তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে জেলা শহর ও স্থানীয়দের একটি দল।
এদিকে ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়নি নতুন আর কেউ। নবীনগর থানার ওসি (তদন্ত) নাজির আহমেদের বিরুদ্ধে আসামিদের রক্ষা চেষ্টার অভিযোগ করছেন নিহতের পরিবার। স্বপ্না আক্তারকে গুলি করে হত্যা করা হয় গত ২২শে নভেম্বর রাতে। ঘটনার রাতে ৯টার দিকে সাতমোড়া ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে ফিরে বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাঙ্গরা বাজারে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা খুন করে তাকে। ওই রাতেই স্বপ্না আক্তারের ছোট ভাই আমীর হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে যাদের সঙ্গে স্বপ্নার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিরোধ আছে এমন ৬/৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হচ্ছে- বাঙ্গরা উত্তরপাড়ার আপন, বিল্লাল, নাহিদ, মেরকুটার যুবলীগ নেতা আলমগীর এবং চারিপাড়ার সাঈদ ও নাজিম উদ্দিন। এ ছাড়া হুড়ুয়া গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীরের নামও সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপকর্মের হোতা বলে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয় তাদের সঙ্গে নিহত স্বপ্না আক্তারের মতবিরোধ চলছিল। অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের দিয়ে এরা স্বপ্নাকে খুন করিয়েছে বলে পরিবারের ধারণা। তাদের মধ্যে সিএনজি চালক জাহাঙ্গীরকে রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে সাঈদ ওরফে সাঈদ্দা চোরা (৩৫) ও আবু জাহের (৩২) নামে আরো দু-জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আর কোনো আসামি আটক হয়নি। মামলার বাদী আমীর হোসেন বলেন- মামলায় তিনি যাদের নাম দিয়েছেন তাদের সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা এর আগেও একাধিকবার স্বপ্নাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তিনি জানান- জিনদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর, নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ সরকার ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি বিল্লাল মিয়া গত ইউপি নির্বাচনের সময় এলাকায় প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা ফাঁকা গুলিও ছুড়ে। বিল্লালের ভাই হাবলু মোটরসাইকেলের পেছনে কিরিচ বেঁধে ঘুরে বেড়াত এলাকায়। ৮/৯ মাস আগে ডাকাতি করে আনা স্বর্ণালংকার সাঈদ্দা চোরার বাড়িতে ভাগবাটোয়ারা করার সময় মোটরসাইকেল সহ ধরিয়ে দেয় স্বপ্না হাবলুকে। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ আরো অনেকের সম্পৃক্ততা টের পাচ্ছে। বাদী শুধু স্থানীয়ভাবে যাদের সঙ্গে স্বপ্নার বিরোধ তাদের নাম বলেছে। ঘটনার নায়করা তাদের মিশনে এই অপরাধীদেরও সম্পৃক্ত করে বলে পুলিশ সূত্র জানায়। এর সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে যাওয়া একটি দলেরও যোগাযোগ হয়। এদিকে মামলার বাদী আমীর অভিযোগ করেন নবীনগর থানার ওসি তদন্ত নাজিরের আত্মীয় বিল্লাল ও হাবলু। সেকারণেই তাদের ধরছে না পুলিশ। নিহত স্বপ্না আক্তারের বড়ভাই সুদন মিয়াও সম্প্রতি একই অভিযোগ করেন। জেলা পরিষদের এক সদস্য সান্ত্বনা জানাতে স্বপ্নার বাড়িতে গেলে সুদন গ্রামের মানুষের সামনে বলেন- পুলিশ কর্মকর্তা নাজিরই আসামি ধরছে না। সে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
এএসপি (নবীনগর সার্কেল) চিত্ত রঞ্জন পাল বলেন- আমরা আশা করছি শিগগিরই এ হত্যা রহস্যের কূলকিনারা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন