ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের চাওয়া ‘উইনেবল ক্যান্ডিডেট তথা বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য প্রার্থী’। দলটির সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতাই বলছেন, আমরা চাই বিজয়। আর ক্ষেত্রে সরাসরি দলীয় নেতাকর্মী না হলেও সমর্থক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন উইনেবল কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
.
আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে কে উইনেবল ক্যান্ডিডেট বা কাকে তারা মনোনয়ন দিচ্ছেন- এমন প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছে। তারা পরিবর্তন ডটকমের এই প্রতিনিধির সঙ্গে সরাসরি একক কারো নাম না বললেও কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিছু ইমেজধারী মানুষের নামও উঠে এসেছে আলোচনায়।
তবে আনিসুল হকের পর কাকে বাছাই করবে আওয়ামী লীগ বা কে আওয়ামী লীগের উইনেবল ক্যান্ডিডেট তা এখনো পুরোপুরি খোলাসা হয়নি।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে ১ ডিসেম্বর থেকে ডিএনসিসির মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের কাজও শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ সিটি মেয়র হতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এরই মধ্যে অনেকে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নানা উপায়ে হেভিওয়েট থেকে শুরু করে অনেক নেতারাই তদবির শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের বাসামুখী হয়েছে দলীয় নেতা, ব্যবসায়ীসহ অনেক তারকা।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে- ঢাকা উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সাবেক এমপি এইচবিএম ইকবাল, সারাহ বেগম কবরী উল্লেখযোগ্য।
পত্র-পত্রিকায় যাদের নাম এসেছে, তাদের বাইরেও প্রার্থী হতে পারে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মূলত, আওয়ামী লীগ চায় এমন একজন ব্যক্তি, যার ইমেজে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ স্বতঃফূর্তভাবে ভোট দেবে। তিনি মেয়র হলে আনিসুল হকের মত কাজও করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় কিছু নাম উঠে এসেছে, যারা হতে পারেন সেই উইনেবল ক্যান্ডিডেট। এরা হলেন-
রুবানা হক
রুবানা হক আনিসুল হকের সহধর্মীনী। আনিসুল হকের মত টিভি উপস্থাপনা দিয়েই কর্মজীবন শুরু তার। এরপর থেকে একজন সফল ব্যবসায়ী। ২০০৬ থেক ২০১০ সালে তিনি সাউথ এশিয়া টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে করা বিবিসি’র ১০০ নারী নিবন্ধে তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্যবসার পাশাপাশি সাহিত্যও চর্চা করেন। ২০০৬ সালে তিনি কবিতার জন্য সার্ক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানের মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওম্যান এর ট্রাস্ট্রি মেম্বার। বক্তব্য-উপস্থাপনাসহ নানা যোগ্যতার বিবেচনায় এক অসাধারণ নারী।
অনেকেই মনে করেন, আনিসুল হকের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া মেয়র পদে তার স্ত্রী রুবানা হককে মনোনয়ন দিলে সহমর্মিতার কারণেও মানুষ তাকে ভোট দেবে। আর আনিসুলের মত একজন সফল নারী হিসেবে তিনিও এই শহরের মানুষের জন্য সফলভাবে কাজ করতে পারবেন। এ বিষয়ে আনিসুল হকের একমাত্র ছেলে নাভিদুল হক বলেছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো সিদ্ধান্ত পালনে প্রস্তুত।
আবদুস সালাম মোর্শেদী
আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশের একজন কৃতি ফুটবলার ছিলেন। তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলতেন। ১৯৮২ সালে তিনি ২৭টি গোল করে ঢাকা ফুটবল লীগে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। সালাম মুর্শেদী বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, বর্তমানে এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আলোচনায় উঠে এসেছে তার নামও। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তাকে দিলেও খারাপ হবে না। কর্মক্ষেত্রে বেশ সফল এ মানুষটিকে দিয়েও আনিসুল হকের শূণ্যতায় কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।
সোহেল তাজ
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, জাতীয় চার নেতার একজন তাজউদ্দিন আহমেদ। তার সন্তান তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। দলের দুঃসময়ে সবচেয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তাজকে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগ। ত্যাগী ও অভিমানী এই নেতা ‘অজ্ঞাত’ কারণবশত প্রতিমন্ত্রী ও এমপির পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন। নানা সময়ে পার্টি ও নির্বাচনী এলাকা কেন্দ্রিক কিছু কাজ করলেও নেই কোনো পদে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সোহলে তাজকে মনোনয়ন দিলে এই শহরের মানুষ তাকে গ্রহণ করবে। ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও পরিশ্রমী সোহেল তাজও কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই এখানে ভালো কাজ করতে পারবেন। ঢাকার মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন।
ড. একে আজাদ চৌধুরী
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী (একে আজাদ চৌধুরী)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান। নয়াদিল্লিভিত্তিক সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, আওয়ামী লীগে ক্লিন ইমেজের মানুষদের একজন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অভিজ্ঞ এ লোকটিকে উত্তর সিটির উপনির্বাচনে মানুষ তাকে গ্রহণ করবে।
ডা. দীপু মনি
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আলোচনায় নেতারা তাকেও উইনেবল মনে করছেন। তবে ডা. দীপু মনি পরিবর্তনকে বলেন, আমি এটা ভাবিনি, এমন বিষয় আমার মাথায়ও আসেনি। আমি সংসদে আছি, থাকতে চাই। তবে, যেহেতু দল করি। দল কোনো সিদ্ধান্ত দিলে মাথা পেতে নেব।
গত ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। মনোনয়ন বোর্ড যথা সময়ে প্রার্থী দেবে। তবে আওয়ামী লীগ ঢাকা উত্তরসহ সারাদেশে যে উন্নয়ন করেছে, তাতে জয়লাভের সুযোগ আছে।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদা মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আওয়ামী লীগের যোগ্য লোকের অভাব নেই। সরাসরি দলীয় নেতা বা দলের বাইরে কর্মী-সমর্থক অনেক আছে, যাদের মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড যথা সময়ে তাদের থেকে একজনের নাম চূড়ান্ত করবে।
পরিবর্তন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন