শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার দলীয় নেতারা স্থানীয় কৃষকদের উর্বর জমি কেটে খাল তৈরি করছে। আর এতে বিপদে পড়েছেন কয়েকশ চাষী। স্থানীয় সাংসদ ও কৃষিমন্ত্রী চাষাবাদে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের লক্ষ্যে এবং কৃষকদের সুবিধা দিতে কাবিটার এই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। তবে কৃষকদের অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা এসব উর্বর জমিতে খাল খনন করেছে। এর ফলে চাষীদের প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি খালের মধ্যে চলে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
এদিকে এলাকাবাসী খাল খনন বন্ধের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী বরাবর প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও কৃষকদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চাষাবাদে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের লক্ষ্য ও কৃষকদের সুবিধা দিতে কৃষিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নামে বরাদ্ধকৃত কাবিটার (কাজের বিনিময়ে টাকা) অর্থায়নে উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের উমতা বাঘবেড় মৌজায় একটি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৭ ডিসেম্বর বৃহষ্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা খনন যন্ত্র দিয়ে ওই খাল খননের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকারি দলের কয়েকজন নেতা।
এতে তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী খাল খননের প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে খাল খনন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বরাবর ২৬৭ জন এলাকাবাসীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রতিবাদলিপি প্রদান করে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেখান দিয়ে খালটি খনন করা হচ্ছে, সেখানে কোনোকালেই খালের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। উমতা বাঘবের মৌজায় প্রায় ২ হাজার একর জমিতে গভীর নলকূপের পানি দিয়ে সবসময় চাষাবাদ হয়। বন্যারও কোনো প্রভাব নেই। ওই এলাকায় খালের প্রয়োজনীতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জমিহারা কৃষকেরা।
বাঘবেড় চরপাড়া গ্রামের বিধবা নারী ফাতেমা বেগম (৫০) প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। ৩০ শতাংশ জমির ওপর নির্ভর করে আমার তিন ছেলেমেয়ের অভাবের সংসার। আমার জমির পুরোটুকুতেই খাল খনন করা হয়েছে।’
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কোথায় যাব।’
চাঁন মিয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, আমার আধাপাকা ধানখেত খনন যন্ত্র দিয়ে খনন করে খাল বানিয়ে ফেলেছে সরকার দলীয় নেতারা। আমি হাতে পায়ে ধরে ক্ষেতের ধান কাটার জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে সে সময়টুুকুও দেয়নি। তারা ক্ষেতের ধানসহ খনন করে ফেলেছে।
ব্যাক্তিমালীকানাধীন জমিতে রাতের অন্ধকারে খাল খনন কাজ শুরু করেছে শেরপুরে সরকার দলে স্থানীয় কয়েকজন নেতা। ছবি: সংগৃহীত
এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু প্রিয়.কমকে জানান, মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে কাবিটার টাকায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় খাল খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী যা করেন, এলাকার কল্যাণের জন্যই করেন। এই খালটি খনন করে পাশ্ববর্তী চেল্লাখালি নদীর সঙ্গে আন্ডার গ্রাউন্ড লিংকেজ তৈরি করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে।
রাতের অন্ধকারে খনন কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি যে খনন যন্ত্রটি আছে, তা নষ্ট হয়ে আছে। তাই রাতে কাজ করার চুক্তিতে ব্যাক্তি মালিকানাধীন খনন যন্ত্রটি ভাড়া করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তরফদার সোহেল রহমান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমি খাল খনন বন্ধের জন্য একটি আবেদন পত্র পেয়েছি। যথারীতি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
They are the producers of Akayed
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন