সরাসরি রাজনীতিতে নামতে চান সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। আওয়ামী ঘরানার ওই আমলা জীবনের বাকিটা সময় রাজনীতিতে কাটানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ঘনিষ্ঠমহলে। কিন্তু এখনও তিনি মুখ খুলছেন না। অপেক্ষায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রীন সিগন্যালের। যদিও সিলেট-১ আসনে ছহুল হোসাইন মনোনয়ন পেতে পারেন এমন খবরে এরই মধ্যে সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট-১ আসনের বর্তমান এমপি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্বাচনে লড়বেন এমন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
দু’বছর আগে বয়সের কারণে তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তাছাড়া অর্থমন্ত্রীর সহোদর জাতিসংঘে দীর্ঘ সময় স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত ড. একে আবদুল মোমেন নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজও সিলেট থেকে নির্বাচন করতে চান। হাইকমান্ড চাইলে সিলেট-১ বা সিলেট-৩ এর যে কোনোটিতে লড়বেন তিনি। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে ঘিরেও স্বপ্ন দেখেন তার অনুসারীরা। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে যে কোনো নির্বাচনে আলোচনায় থাকেন কামরান। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত মর্যাদা পূর্ণ সিলেট-১ আসনের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা কি সিদ্ধান্ত দেন তাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
সাবেক আইন সচিব ছহুল হোসাইন অবসরে যাওয়ার পরপরই রাজনীতিতে নামছেন- এমনটা চাউর হয়েছিল। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময়কালে সাংবিধানিক দায়িত্বে চলে যাওয়ায় সেটি হয়নি। এবার তিনি পুরোপুরি মুক্ত। নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও বিতর্কমুক্ত থাকতে পেরেছেন ক্লিন ইমেজধারী ওই ব্যক্তিত্ব। সমপ্রতি তিনি তার পৈতৃক নিবাস সিলেটে একান্তে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন। সেখানে পরিবারিক বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হয়েছে। অনেকে তাদের কষ্টের কথা বলেছেন। স্থানীয় এমপি অর্থমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে স্থানীয়ভাবে সময় কম দেয়ার অভিযোগ তুলে কেউ কেউ আগামী নির্বাচনে তাকে মানোয়ন চাওয়ার অনুরোধও করেছেন। পোড় খাওয়া ওই আইনজ্ঞ মাঠ পর্যায়ের নেতাদের কথা শুনেছেন বেশি, বলেছেন খুবই সামান্য। গত অক্টোবরে নগরীর কাজীটুলাস্থ বাসভবনের সেই মতবিনিময়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি আবদুল খালিক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জুবের খান উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক ওই মতবিনিময়ের পরে সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গেও তার একান্ত বৈঠক হয়। সাবেক ও বর্তমান অনেক কাউন্সিলরও ছহুল হোসাইনের সঙ্গে দেখা করেছেন। সিলেট-১ আসনকে ঘিরে অনেক মিথ রয়েছে। হযরত শাহ্জালাল (রহ:) ও শাহ্পরান (রহ:)-এর স্মৃতিধন্য ওই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয় সেই দলই সরকার গঠন করে- এমন ধারণা চালু রয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে। তাছাড়া সিলেট-১ থেকেই সব দলের নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়। এ কারণেও দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে আসনটি মর্যাদাপূর্ণ। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন ব্যবস্থার অধীনে হবে? তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- এমনটি ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যেই পান না কেন তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নেও জন সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেখানে চমক প্রার্থী থাকার আভাস দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সূত্রগুলো। আর একক বা জোটবদ্ধ যে প্রক্রিয়াই হোক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চাইছেন সিলেট-১ আসনটি। সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং ছহুল হোসাইনের মনোনয়ন চিন্তার বিষয়ে কথা হয় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে। ছহুল হোসাইন যখন গত অক্টোবর মাসে সিলেটে গিয়েছিলেন তখন অন্য অনেকের সঙ্গে কামরানও তার কাজীটুলার বাসায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে কামরান বলেন, ছহুল হোসাইন সাহেবের চায়ের দাওয়াতে আমি তার বাসায় যাই। আমার যাওয়ার আগেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিসহ অনেকের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। তিনি আমার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। রাজনীতিতে নামা এবং আগামী নির্বাচনে সিলেট থেকে মনোনয়ন চাওয়ার চিন্তা করছেন বলে জানান। আমি তাকে বলি- স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে আপনি খুব বেশি কিছু করতে পারবেন না। যদি নেত্রী আমাদের নির্দেশ দেন আমরা অবশ্যই দলের স্বার্থে, দলীয় শৃঙ্খলার কারণে সেটি বাস্তবায়ন করবো। কামরান মানবজমিনকে বলেন, আমি এটিও বলেছি- মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে যখন সিলেটে মনোনয়ন দেয়া হয় তখন নেত্রী সবাইকে ডেকে ছিলেন। তার নির্দেশ মতেই আমরা তাদের জন্য কাজ করেছি। কামরান বলেন, এবারও তাই হবে। জননেত্রী যাকে দেবেন এক্স, ওয়াই, জেড দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই থাকবেন। এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং ছহুল হোসাইনের পরিবারের সদস্য দিলওয়ার হোসাইন সজীবের দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতার সঙ্গেই তার (ছহুল হোসাইন) কথা হয়েছে। অনেকে তাকে নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার অনুরোধ করেছেন। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। নেত্রীর গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার অপেক্ষায় থাকার কথাও জানিয়েছেন। মনোনয়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান কাউন্সিলর সজীব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন