ডিজিটাল বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মসহ অনেকের কাছে অনলাইনে কেনাকাটা সুপরিচিত। এমন মানুষদের কাছে আলীবাবা নামটিও অপরিচিত নয়। এই আলীবাবা আরব্য রজনীর নয়, অনলাইন কেনাকাটার আলীবাবা ডটকম। অনলাইনে কেনাকাটায় বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান চীনের আলীবাবা। আর তিল তিল গড়ে আলীবাবার বর্তমান সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন চীনা তরুণ জ্যাক মা। চীনা এক ইংরেজি শিক্ষক থেকে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী হয়েছেন জ্যাক। আলীবাবা গড়তে গিয়ে জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়োতে হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আলীবাবা, দ্য হাউস দ্যাট জ্যাক মা বিল্ট’ বইয়ে উঠে এসেছে আলীবাবাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসায় জ্যাক মার সংগ্রামের কথা। বইটির কিছু কিছু অংশ বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা ইনসাইডার। আজ থাকল তৃতীয় অধ্যায়:
‘চীনে যদি তুমি মিলিয়নের মধ্যে একজন হও, তাহলে তুমি এক হাজার ৩০০ এর মধ্যে একজন‘-বিল গেটস।
চীনা উদ্যেক্তাদের ভবিষ্যত আদর্শ জ্যাক মা যখন বিশ্বে পা রাখেন, তখন ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। চীন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে একা হয়ে পড়ছিল।
বালক বয়সেই জ্যাক ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রেমে পড়েন। রেডিও তে নিয়মিত তিনি মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্জার অব টম সয়্যার শুনতেন। চীনে যখন থেকে বিদেশি পর্যটক আসা শুরু হলো, বিশ্বের দরজা জ্যাকের সামনে খুলে গেলো। চীনা বিনিয়োগ ও ব্যবসায় প্রসার করতে সেদেশে `ওপেন ডোর‘ পলিসি চালু করা হয়েছিল।
১৯৭৮ এ মাত্র ৭২৮ জন পর্যটক বাংঝাউ তে ভ্রমণে আসে। পরবর্তী বছরে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ হাজারের বেশি। জ্যাক ইংরেজি অনুশীলনের জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি ছিলেন। প্রতিদিন বৃষ্টি, তুষারপাত উপেক্ষা করে ভোরে সাইকেল চালিয়ে পর্যটক হোটেলের সামনে চলে যেতেন। পর্যটকদের ফ্রি গাইড দিতেন, সঙ্গে ইংরেজি শিখে নিতেন। এভাবেই চলে মাসের পর মাস। এভাবে অনেক পর্যটকদের সঙ্গে সখ্যতাও গড়ে উঠেছিল জ্যাকের।
জ্যাক বলেন, ইংরেজি তাঁকে বিশ্ব চিনতে অনেক সহায়তা করেছে। বিশ্বের সব সিইও এবং নেতাদের চিনতে শিখিয়েছে।
শিক্ষক
জ্যাকের নেতৃত্ব নেওয়ার গুণটা দেখা গিয়েছিল ছাত্র থাকা অবস্থায়ই। হাংজুর স্টুডেন্ট ফেডারেশনের প্রেসেডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাধিক অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজনও করেন জ্যাক। ১৯৮৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে যান জ্যাক। মোরলে পরিবারের আমন্ত্রণে অস্টেলিয়ার নিউজ সাউথ ওয়েলসে থাকেন কিছুদিন। দেশে থাকতে তিনি শিখেছিলেন চীনই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তাঁর ভুল ভাঙে। একই সঙ্গে বুঝতে পারেন নিজের চিন্তা দিয়েই কোনো কিছু বুঝতে হবে। তবে সববসময়ই বিদেশিদের সঙ্গে চটপটে ছিলেন জ্যাক। অস্টেলিয়া থাকাকালীন সময়ে বিশেষ কুংফুর কসরৎও দেখিয়েছিলেন। জ্যাকের পরিবারের অস্বচ্ছলতার কথা মোরলে পরিবার জানতো। তাই জ্যাকের পড়াশুনার জন্য মোরলে পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকমাস পরপরই অর্থসহায়তা পেতেন জ্যাক। এমনকি জ্যাক যখন বিয়ে করেন মোরলে পরিবারের পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন অন্যরকম এক উপহার, প্রথম নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় জ্যাককে ২২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৮ হাজার মার্কিন ডলার) দিয়েছিল মোরলে। পরবর্তী জীবনে জ্যাক সফলতা পাওয়ার পর মোরলে পরিবারের প্রধান কেন ২০০৪ সালে মারা যান। অবশ্য জ্যাকের প্রাথমিক সাফল্য দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল কেনের। আর জ্যাকের পক্ষ থেকে মূল্যবান সব উপহারে লজ্জায় পড়ে যেতেন কেন মোরলে। এখনো জ্যাক ও মোরলে পরিবারের মধ্যে বন্ধন অটুট আছে।
ধনী হওয়া আসলেই অসাধারণ
ইংরেজিতে স্নাতক শেষ করার পর হাংঝাউ ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ সে ইংরেজি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেকচারার হিসেবে যোগ দেন জ্যাক। তার সহকর্মীদের তুলনায় এই ক্ষেত্রে তিনি অনেক এগিয়ে ছিলেন। তার একটা কথা বেশ সুন্দর, `তুমি ধনী হতে পারো, অন্যদের ধনী হতে সাহায্য করতে পারো‘।
দুই বছরের চুক্তিতে শিক্ষক হয়েছিলেন জ্যাক। তবে চুক্তি শেষ হওয়ার বেশ আগেই সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি। হাংঝাউ ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়ে স্থানীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ইংরেজির শিক্ষক হন জ্যাক। শিক্ষক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পান জ্যাক, যার মূল কারণ ছিল গ্রামার বা পাঠ্য বই না দেখে এর বাইরে কোনো একটা বিষয় নির্বাচন করে তা নিয়ে আলোচনা করতেন জ্যাক।
শিক্ষকতার শেষ দিনগুলোতে খন্ডকালীন হিসেবেই ব্যাবসা শুরু করেন জ্যাক। এর নাম দেন ‘হোপ’। পরবর্তীতে তাই জ্যাকের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন