১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতের পর থেকে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে পূর্ব পাকিস্তান এক নতুন বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বেবাসীর কাছে পরিচিত লাভ করে। লাখো নারী-পুরুষের রক্ত, জীবন ও ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে তখন বাংলাদেশের সেনা প্রধান ও বীর সেনানী জেনারেল ওসমানী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ভারতীয় সেনা প্রধানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন পাকিস্তানি সেনা প্রধান।
যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের। ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। তারা বাংলাদেশের মিত্রশক্তি। পাকিস্তানিরা আত্মসমর্থন করবে বাংলাদেশের সেনা প্রধানের কাছে। মিত্রশক্তি হিসেবে ভারতের সেনা প্রধানও কাছে থাকবে। কিন্তু, ঘটনা ঘটেছে সম্পূর্ণ বিপরীত। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেনা প্রধানকে তারা অনুষ্ঠানস্থলেই আসতে দেয়নি। তখন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয় মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
এঘটনায় অনেকেই তখন মনে করছিলেন যে, এই মিত্র শক্তিই একদিন মূল শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। সচেতন মানুষের সেই দিনের সন্দেহ সংশয় ও ধারণা যে ভুল ছিল না তা এখন বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর ভারত দাবি করছে যুদ্ধ হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সহযোগিতা করেছিল।
বিজয় দিবসের ঠিক একদিন আগে শুক্রবার সকালে জাতীয় জাদুঘরে ৪৭তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন সাবেক ভারতীয় উইং কমান্ডার ডিজে ক্লে ভিএম। অনুষ্ঠানে ভারতীয় উইং কমান্ডার ডিজে ক্লের ১২ দিনে ঢাকা বিজয় বইয়ের উন্মোচন করা হয়। বইয়ের পরিচিতিতেও মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাক যুদ্ধ হিসেবেই লেখা হয়। এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বইয়ের লেখকের কাছে জানতে চাইলে আর্মড ফোর্সেস ভেটেরান উইং কমান্ডার ডিজে ক্লে ভিএম বলেন, এতে আপত্তির কিছু নেই।
এরপর, বিজয় দিবসের দিন শনিবার কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল শাখার বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এই বিতর্কের বিষয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদর দফতরের প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন তিনি বলেন, অবশ্যই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ছিল। তারাও এর অংশীদার ছিলেন। আর সেই কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ওই সময় পাকিস্তানের অংশ ছিল তাই স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য।
ভারতীয় সেনাদের এসব বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রাজনীতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের এই বক্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বিশিষ্টজন ও মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে এটা সত্য। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্ত, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে আর বাংলাদেশ তাদেরকে সহযোগিতা করেছে এমন কথা বলার সাহস তারা কোথায় পেলো? সরকার এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না। আমরা আজ এমন এক সরকারের অধীনে আছি যেখানে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করার সুযোগও আমাদের নেই। সরকার নিজেও প্রতিবাদ করছে না এবং মানুষকেও প্রতিবাদ করতে দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করে একজন মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ করলাম আমরা। তারা শুধু সহযোগিতা করেছে। অথচ আজ তারা বলছে আমরা নাকি যুদ্ধের অংশীদার। আমরা নাকি তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। যুদ্ধ যদি পাক-ভারত হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালন করবো কেন? এটাও ভারতে করা হোক।
পাঠক মন্তব্য
কথাটি সত্য। ভারতের চারপাশে চীন,পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান, মিয়ানমার। তাই চারদিক থেকে আক্রমণ প্রতিহত করতেই ২ পাকিস্তানকে আলাদা করা হয়েছিল।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন