নারায়ণগঞ্জে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের অনুসারী নিয়াজুল ইসলামের হাতে পিস্তুল নিয়ে জোর আলোচনা চলছে তিন দিন ধরেই। কারণ, তার ছবিটিই প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। কিন্তু সংঘর্ষের সময় আরও একাধিক ব্যক্তির হাতে অস্ত্র দেখা গেছে যারা ছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনুসারী।
মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আবু সুফিয়ান এবং মেয়রের মিছিলে আসা সুমন নামে একজনের হাতে অস্ত্রের ছবি সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছেন শামীম ওসমান।
আইভী তার সংবাদ সম্মেলনে নিয়াজুলের হাতে অস্ত্র নিয়ে নানা অভিযোগ করলেও তার অনুসারী আবু সুফিয়ান ও সুমনের হাতের অস্ত্রের বিষয়ে এখনও মুল খুলেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের দিন দুই দিক থেকেই মুহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে সেদিন কেবল নিয়াজুলের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, যদিও তিনি গুলি করেছেন কি না সেটা স্পষ্ট না। কারণ হাতে পিস্তল দেখার পর তিনি আইভী সমর্থকদের বেদম পিটুনির শিকার হয়েছেন।
আবার পিটুনির এক পর্যায়ে নিয়াজুলের হাতের অস্ত্রটি খোয়া গেছে বলে তার হয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন শামীম ওসমান। আর এ ব্যাপারে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে কোমড়ে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা এ কে এম আবু সুফিয়ান সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি যুবলীগের কর্মী ছিলেন। পরে তিনি মেয়র আইভীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তিনি জেলার একজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার হয়ে ওঠেন। জেলার সর্বোচ্চ করদাতাও হয়েছিলেন সুফিয়ান।
অস্ত্র হাতে সুমন নামে যার ছবি উঠেছে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। শামীম ওসমান অভিযোগ করেছেন, সেদিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও কাউন্সিলর বিভা হাসানের বাহিনী হকারদের উপর হামলা করেছে। এ সংক্রান্ত স্থিরচিত্রও প্রকাশ পেয়েছে।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের প্রায় পাঁচ হাজার হকারদের উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন ও জেলা পুলিশ বাহিনী। এই হকারদেরকে আবার ফুটপাতে বসতে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শামীম ওসমান।
গত ১৫ ডিসেম্বর মেয়র আইভীকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শামীম। আর পরদিন আইভী তার কয়েক হাজার কর্মীকে নিয়ে শামীম ওসমানের কর্মীদের অবস্থানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধে সংঘর্ষ।
রাজধানী লাগোয়া জনপদে শামীম ওসমান ও আইভীর দ্বৈরথ নিয়ে বারবার প্রতিবেদন এসেছে গণমাধ্যমে। আর ১৬ জানুয়ারির সংঘর্ষের রেশ কয়ে গেছে এখনও। সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেও এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই বার্তা শামীম এবং আইভীকে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং অস্ত্রধারী কাউকে ছাড়া হবে না বলে ‘অ্যাসিউরেন্স’ (নিশ্চয়তা) দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছে, মঙ্গলবারের সংঘর্ষ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দারকে প্রধান তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর তুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও র্যাব ১১-এর সহকারী পরিচালক (এএসপি) বাবুল আখতার।
এদেরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে সাত দিন সময় দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে অস্ত্রধারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্রগুলো লাইসেন্স করা থাকতে পারে। কিন্তু মারামারিতে অস্ত্র নিয়ে যেতে এই লাইসেন্স দেয়া হয়নি। বৈধ অস্ত্রেরও অবৈধ ব্যবহারের সুযোগ নেই।
তবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে কোনো বক্তব্য রাখেননি।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন