তিনশ’ সংসদীয় আসনের মধ্যে কয়টি আসনে পরিবর্তন আসবে সেটি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। সংসদীয় আসন বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান সীমানা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে উপজেলার অখণ্ডতা রাখা হলে দেশের ৬৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সংসদীয় আসনের অখণ্ডতা ধরে রাখা ও ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কমবেশি ১০টি আসনের উপজেলার অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সেগুলোর মধ্যে যশোর-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২ এবং চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসন রয়েছে। কমিটি এসব আসনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে এতে পরিবর্তন না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড অখণ্ড রাখতে গিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কয়েকটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কয়েকটি আসনের সীমানাও পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রথম বৈঠকেই প্রাথমিকভাবে অর্ধশত আসনে ছোটখাট পরিবর্তন আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটি নির্ভর করছে সীমানা পুনর্নির্ধারণের তালিকা তৈরির জন্য দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দেয়া প্রতিবেদনের ওপর। কোন কোন আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন চূড়ান্ত করবে। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কশিমনার মো. রফিকুল ইসলাম বৈঠকের বিষয়ে বলেন, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সীমানা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে এনেছি। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়া ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কারণে কিছু আসনের পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এর সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, পুরনো আইনের আলোকে সীমানা বিন্যাস হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ও উপজেলা এলাকার সীমানা অক্ষুণ্ন থাকবে। পাশাপাশি জেলার আসন বিদ্যমান সংখ্যা অপরিবর্তন রেখে জেলার ভেতরের আসনগুলোর আয়তন বাড়তে বা কমতে পারে। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হওয়া ছিটমহলগুলো সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে সংযোজন-বিয়োজন হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা অখণ্ড রাখার কারণে অর্ধশত সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩, নীলফামারী ৩ ও ৪, রংপুর- ৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম- ৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ- ১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, মাগুরা-১ ও ২, এবং খুলনা-৩ ও ৫। একই অবস্থা সাতক্ষীরা- ৩ ও ৪, জামালপুর- ৪ ও ৫, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ৩ ও ৫, নরসিংদী-১ ও ২, ফরিদপুর-২ ও ৪, গোপালগঞ্জ-১ ও ২, মাদারীপুর-২ ও ৩, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার-২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, এবং চট্টগ্রাম-৭, ৮, ১৪ ও ১৫।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদ লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে বেরিয়ে যাবে। এ জেলার জন্য এটি বড় পরিবর্তন। এবার সাভার উপজেলার ইউনিয়নগুলো একই আসনের আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯ আসনের সীমানা পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তারা আরো জানান, কুমিল্লার দুটি থেকে চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসতে পারে। ইতোমধ্যে কুমিল্লার-১০ সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে কমিটি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কমিশন। আপিল বিভাগের রায়ের পর কতটি আসনের সীমানা পরিবর্তন আসবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
তারা আরো জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈইল উপজেলা খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসনের মধ্যে ছিল। নতুন খসড়ায় একত্রিত করে একটি আসনে আনা হবে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলাও বর্তমানে খণ্ডিত রয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসন থাকলেও এখন একত্রিত করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। ওই দলগুলো ছোটখাট পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফেরত যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কয়েকটি দল জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাব রাখা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন