বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে বসে কে এম নূরুল হুদা প্রথম বছরটি সফলভাবেই পার করছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা; তবে তারা বলছেন, আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তার সামনে।
এই বছরে শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনাটাই তার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
“রোডম্যাপ ধরে এগোতে সব দলকে ভোটে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ,” বলেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডাব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিদেশিরাও সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছেন।
বুধবার নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের নেতা জ্যঁ ল্যামবার্টও এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভূমিকার কথাই জোর দিয়ে বলেন।
ল্যামবার্টও বলেন, তারা ইসিকে এমন ভূমিকায় দেখতে চায়, যেন নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যত নির্বাচন কমিশনার এসেছেন, তাদের মধ্যে খুব কম ব্যক্তিই বিতর্ক এড়িয়ে বিদায় নিতে পেরেছেন।
সেই প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির দূরত্বের মধ্যে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর নূরুল হুদার ভূমিকা এখনও প্রশ্নের মুখে পড়েনি।
ইডাব্লিউজি পরিচালক আলীম বলেন, “এক বছরে ইসি দুটি সিটি নির্বাচন ভালোভাবে করে জন আস্থা অর্জন করেছে। সবার সঙ্গে সফলভাবে সংলাপ করেছে। বিএনপিসহ অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেষ্টাও করেছে।”
নিজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এক বছরে কী করেছি, তা জনগণই মূল্যায়ন করবে। আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমরা সংবিধান ও আইন মেনে কাজ করে যাব।”
সব দলের অংশগ্রহণে বছর শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে একটি ‘রোডম্যাপ’ প্রণয়ন করে তা ধরে কাজ করে যাচ্ছে ইসি। তার আগে বছরের মধ্যভাগে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে তাদের।
কিন্তু এর মধ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে।
বিএনপি বলছে, তাদের নেত্রীকে ভোট থেকে বাদ দিতেই ‘পরিকল্পিতভাবে’ সাজার এই রায় দেওয়া হয়েছে; অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আদালতের কাজে তাদের কোনো ‘হস্তক্ষেপ’ নেই।
নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা খালেদার রায় নিয়ে ইসির যে কিছু যে করার নেই তা সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা বলে আসছেন। ইসির ভাষ্য, সরকারের ধরন কী হবে তা সংবিধানে থাকবে, যা ঠিক করবে সংসদ। আর খালেদার বিষয়টি নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্তের উপর।
খালেদার রায়ের পর বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিএনপি আগের মতোই ভোট না করার ছুতো খুঁজছে। কিন্তু তারা না এলেও নির্বাচন হবে।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ইসি বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ইসি
এই অবস্থায় বিএনপির আস্থা অর্জন করে তাদের ভোটে আনাটাই গুরুত্বপূর্ণ হবে ইসির জন্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক বছরে বর্তমান কমিশন যা করেছেন, তার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ সামনে। সবার আস্থা অর্জন করতে পারলেই তারা ভালো নির্বাচন করতে পারবেন।”
ভোট নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, “ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সফররত প্রতিনিধি দলও উদ্বিগ্ন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু আস্থা অর্জন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ইসি ও সরকারকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।”
অন্যতম বড় দল হিসেবে বিএনপির আস্থা অর্জনে ইসির এখন পর্যন্ত ভূমিকায় যথাযথ বলেই ঠেকছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক আলীমের কাছে।
“কে এম নূরুল হুদা কমিশনের সব চেয়ে ভালো উদ্যোগ হয়েছে- বিএনপিকে আস্থায় আনা। দলটি বাইরে যা-ই বলুক না কেন, ভোটে আসার বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে সব সময় ইতিবাচক আলোচনা করেছে।”
সিইসি কে এম নূরুল হুদা (ফাইল ছবি) সিইসি কে এম নূরুল হুদা (ফাইল ছবি)
সিইসি নূরুল হুদাও বুঝছেন, বড় দল হিসেবে বিএনপিকে বাইরে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ভোটে আনার বিষয়েও বেশ আশাবাদী তিনি।
আলীম বলেন, “মূল চ্যালেঞ্জটা সামনেই। শুধু মুখেই সব দলকে ভোটে চাইলে হবে না; কার্যকর উদ্যোগও নিতে হবে।”
শুধু বিএনপি নয়, প্রজাতন্ত্রের আসল মালিক জনগণ যেন ইসির কাজে আস্থা পায়, তা নিশ্চিত করতেই কাজ করতে হবে বলে মনে করেন এই ভোট পর্যবেক্ষক।
“সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে; সেক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কিভাবে তৈরি হচ্ছে, এখন থেকেই জনগণকে সে মেসেজ দিতে হবে। জনগণের মনে এ আস্থা তৈরি করতে হবে যে কমিশনের ভূমিকা ইতিবাচক।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন