সন্দেহের তালিকায় থাকতে চান না কোনো নেতা সামাজিক অনুষ্ঠানও এড়িয়ে চলছেন নেতারা নিষ্ক্রিয় নেতারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠছেন সাবেক ছাত্র ও যুব নেতাদের সক্রিয় করার উদ্যোগ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় দলের একটি প্রতিনিধিদল -যাযাদিখালেদা জিয়ার রায়ের পর কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক বিএনপি। কোনো হঠাকারী সিদ্ধান্ত্মে না গিয়ে একেবারে শান্ত্মিপূর্ণ উপায়ে জনমত নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে দলটি। এই পরিস্থিতিতে শুধু দল নয়, সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলছেন দলের নেতারাও। দল ভাঙার আলোচনার মধ্যে কোনো নেতা কোনো অবস্থায়ই সন্দেহের তালিকায় পড়তে চাচ্ছেন না। এ জন্য দলীয় কর্মসূচির বাইরে অন্য সব ধরনের কর্মকা- থেকেও আপাতত নিজেদের বিরত রেখেছেন।
গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরম্ন হয়, বিএনপি ভাঙতে পারে। এ জন্য দলের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহ, অবিশ্বাসও রয়েছে। তবে সর্বশেষ এক-এগারো পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এখনো কারও অন্য পথে পা বাড়ানোর লক্ষণ নেই। কেউ সন্দেহের তালিকাও থাকতে চান না। এ জন্য সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন নেতারা। আর সন্দেহে যাতে পড়তে না হয় সে জন্য দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারাও প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে শুরম্ন করেছেন।
দলের নেতারা মনে করেন, বেগম জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে দলের ঐক্যও ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। নিজেদের মধ্যে বাড়তে পারে সন্দেহ-অবিশ্বাস। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে সরকার। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির বাইরে আপাতত অন্য কিছু ভাবছে না বিএনপি নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি দলের এক বড় নেতার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের আরেক নেতার সামাজিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সন্দেহ দেখা দেয় বিএনপিতে। এরপর দলের হাইকান্ডের কাছে এর ব্যাখ্যাও দিতে হয় ওই নেতাকে। এ ঘটনার পর এখন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকেও নেতারা বিরত থাকছেন। সাংগঠনিক কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজে আপাতত নেতারা নিজেদের জড়াচ্ছেন না। খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যেমন এলাকামুখী হয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা সবাই এখন দলীয় কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত্ম। যারা মামলার ভয়ে পালিয়ে ছিলেন তাদের অনেককে দেখা যাচ্ছে শান্ত্মিত্মপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচিতে। তাদের একটাই কথা, দলীয়প্রধানের মুক্তির বাইরে অন্য কিছুই ভাবছেন না।
কারাবন্দি হওয়ার পর গত ১০ দিনে বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম সুক্ষ্ণভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দলের নেতারা চমৎকার বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো ইসু্যতে করণীয় নির্ধারণে পরস্পরের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। সংগঠনের অভ্যন্ত্মরীণ কার্যক্রম চলছে খুব গোছালোভাবে। এখন পর্যন্ত্ম কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য বা দূরত্ব তৈরি হয়নি। তারেক রহমানের পরামর্শে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সিনিয়র নেতারা তাকে সহায়তা করছেন। দল পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয়, সিনিয়র নেতারা প্রতিটি কর্মসূচিতেও নিজেদের উপস্থিত রাখছেন।
গ্রেপ্তার এড়িয়ে মাঠের নেতারা যে-যেভাবে পারছেন, সাংগঠনিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি কর্মসূচি মনিটর করছেন। এ কারণে সবাই আরও বেশি সতর্ক ও উদ্যমী। এ ছাড়া দলের ঐক্য ধরে রাখতে, নেতাদের সক্রিয় রাখতে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদিন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন। গত চারদিন দলের সিনিয়র নেতা, পেশাজীবী, আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবীদের বৈঠকে টেলি কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান। এ ছাড়া দলকে আরও সুসংগঠিত করতে সাবেক ছাত্র ও যুবনেতাদের আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এখনো যেসব নেতা সক্রিয় হননি, তাদের তালিকা করার জন্য সাবেক এক ছাত্রনেতাকে এরই মধ্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দলের এক সিনিয়র নেতা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে সব বৈঠকেই সরকার যাতে বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে এই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের শৃঙ্খলা নিয়ে যেমন ভাবা হয়েছিল, হয়েছে এর উল্টো। এটা একেবারেই আশ্চর্যের বিষয়। দল যেন আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিএনপি ভাঙার আলোচনা যেন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। দল এখন ভাবনার চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। যেসব নেতা অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দলে ছিলেন, তারাও কাধে-কাধ মিলেয়ে, হাতে-হাত মিলিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।
দলের বর্তমান ভাবনার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির বাইরে আপাতত কোনো ভাবনা নেই। তাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে, চলবে।
দল ভাঙার রাজনৈতিক মহলের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর চক্রান্ত্ম হতে পারে, এ জন্য দলের সবাই এখন সতর্ক। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ। শুধু তা-ই নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নেতারা রাজপথে সক্রিয়ও। মামলা-হামলা, গুম-খুনের পরও একজন কর্মী দল ছেড়ে যাননি। চলমান আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত্মে। তাই শেষ মুহূর্তে কেউ দল ছেড়ে যাবে বলে মনে করেন না। বরং যারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন, দলের এই পরিস্থিতিতে তারা আরও সক্রিয় হচ্ছেন। যায়যায়দিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন