বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের প্রধানকে বাদ দিয়ে দলটি নির্বাচনে যাবে কিনা সেটা নিয়ে দলের নেতারাও রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলটির নেতাকর্মীরা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এটিকে বিএনপির নির্বাচনমুখী হওয়ার বার্তা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি যদি নির্বাচনে যেতে না চাইতো তাহলে দলটি দেশে ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালের মত সহিংসতা সৃষ্টি করত বলেও মনে করেছেন বিশ্লেষকরা।
কিন্তু রায়ের পর থেকেই বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই সরকারের ইশারায় এ রায় দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজা ও আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ- সবকিছুই আদালতের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। তবে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা অবস্থান স্পষ্ট না করলেও, বিএনপিকে তারা নির্বাচনে চান। যেন আগামী নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ না পায়। আওয়ামী লীগ চায় সব দলকে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বরাবরই বলছেন, ২০১৪ সালের মত নির্বাচন তারাও চান না। তারা চান, বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে চায় আওয়ামী লীগ।
তবে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন, গেল বারের মতো এবারো বিএনপি না এলে দলটিকে ছাড়াই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। সময় মতো নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, এখন তারা (বিএনপি) ইলেকশন করবে না? এটা আমি জানি না, যদি না করে কারো কিছু করার নাই। গতবারও ইলেকশন করেনি। আমরা জানতাম তারা ইলেকশনে (গত নির্বাচন) আসবে। কিন্তু বিএনপি ইলেকশনে আসেনি। এবারও যদি কোন দল না আসে, সেখানে আমাদের করার কি আছে?
গত রবিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়াও বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে। যেহেতু বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে তাদের দল আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত। তাই এই শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত দল নিয়ে নির্বাচনে যেতে কেন ভয় পাচ্ছে? আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বেগম খালেদা জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আদালতে সিদ্ধান্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অপর এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যদি নিজেদের অন্তিম ঘণ্টা না বাজাতে চায়, তাহলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। এক্ষেত্রে তারা খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনে আসবে নাকি ছাড়াই আসবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একজন চিহ্নিত, অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ। তাই বিএনপির এক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে এগোনো উচিত। তাছাড়া খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না এটা আদালত জানেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিএনপির এই নির্বাচনে না আসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিএনপি নির্বাচনে আসবেই। এই কথা বিএনপির নেতারাও বলছেন। এখন যদি বিএনপি খালেদা জিয়ার জেলা থাকা নিয়ে নির্বাচন বর্জন করে তাহলে বিএনপির নিঃস্ব হয়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি টানা ১২ বছর যাবৎ ক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের দলের নেতাকর্মীরাও চায় নির্বাচনে যেতে। বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে না যায় তাহলে তাদের দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে যাবে। তখন দলটির নেতাকর্মীদের দলে ধরে রাখাও কষ্টকর হয়ে যাবে। ফলে বিএনপির এবার নির্বাচনে আসা ছাড়া কোন পথ খোলা নেই বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। তাই বিএনপি তাদের নিবন্ধন বাঁচাতে হলেও নির্বাচনে আসবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিএনপির নেতারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমরা চাই সব দল মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির স্বার্থে জন্য কোন রাজনৈতিক দল নয়। রাজনৈতিক দল হয় সাংগঠনিক বিবেচনায়। তাই আমরা সাংগঠনিকভাবেই বিবেচনা করি। আমরা চাই সকল দল নির্বাচনে অংশ নিক।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে আগামী নির্বাচন করতে চাই। বিএনপিও নির্বাচনে আসুক, তা আমরা চাই। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসতে পারবে কিনা সেটা আদালত ভাল জানেন। কারণ তিনি একটা চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি এখন কারাগারে। এটি আইনি প্রক্রিয়া। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত যদি তাকে নির্বাচনের যোগ্য মনে করেন তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন, যদি যোগ্য না মনে করেন তাহলে করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৪২টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। একটা বিশেষ দল নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, এটা ভাবা ঠিক না। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন হবে না তাহলে সেটা তারা ব্যবস্থা করবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নাই।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন