রাজধানীজুড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁয় জারে ভরা যে পানি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে, তার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও তাদের সমর্থনপুষ্ট প্রভাবশালীরা।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, দোকানিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘ভাইয়ের’ নির্দেশ।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের পাশাপাশি এই ব্যবসায় জড়িয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। এলাকা ভাগ করে নিয়ে যে জার তারা সরবরাহ করছেন, তার অধিকাংশই অবৈধ কারখানায় বা পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি ওয়াসার পানিতে ভরা।
স্বল্প বা বিনা পুঁজিতে লাভজনক এই ‘ব্যবসায়’ জড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারাও। নিজেদের কারখানা নেই, তারপরও তাদের নামে যাওয়া পানিই নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন।
হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের দোকানদাররা বলছেন, ঝামেলামুক্ত থেকে ব্যবসা করার জন্যই তারা রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিষ্ঠান বা তাদের সরবরাহ করা পানি কিনছেন।
প্রতিটি জারেই লেখা থাকে ডিলারের নামের আদ্যক্ষর (ছবি প্রতিবেদক) প্রতিটি জারেই লেখা থাকে ডিলারের নামের আদ্যক্ষর (ছবি প্রতিবেদক) আর অনুমোদিত পানি পরিশোধনকারীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের প্রভাব এড়িয়ে কোনো এলাকায় ঢুকতে পারেন না তারা। পানি বিক্রির জন্য তাদেরও নেতাদের ছায়ায় যেতে হয়।
অননুমোদিত জারের পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটাই অসহায়।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক মো. ইসহাক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সমস্যা থাকলে ‘কৌশল করে’ তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও হাজী ক্যাম্প এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায় জারের পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক কাসেম শেখের ছোট ভাই মারফত মিয়া।
দোকানদাররা বলছেন, অন্য একজন আগে সেখানে পানি সরবরাহ করতেন। কয়েক মাস আগে তাকে সরিয়ে মারফত মিয়া ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। গাওয়াইরের ‘মা ড্রিংকিং ওয়াটার’ কারখানা থেকে পানি আনেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে যে পানি দিত হেয়ও আশকোনা এলাকায় অনেক ক্ষমতাবান। কিন্তু ছয় মাস আগে হেরে সরাইয়া দিয়া মারফত ভাই এইখানে পানি দেন।”
এ বিষয়ে কথা বলতে মারফত আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে তার বড় ভাই শ্রমিক লীগ নেতা কাসেম বলেন, “মারফত আমার ছোট ভাই ঠিক আছে। কিন্তু সে প্রভাব বিস্তার করে পানির ব্যবসা করে- এটা ঠিক না।”
‘এল’ দিয়ে বোঝানো হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবদুল লতিফকে ‘এল’ দিয়ে বোঝানো হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবদুল লতিফকে ফার্মগেইট ইন্দিরা রোডে ফুটপাতের সব দোকানের সামনে রাখা পানির জারে দেখা যায় ইংরেজিতে ‘এল’ লেখা। কারণ জানতে চাইলে তেজগাঁও কলেজের সামনের ফুটপাতের একজন খাবার দোকানি বলেন, এসব জার ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবদুল লতিফের। এ কারণে ‘এল’ লেখা।
ইন্দিরা রোডের টিঅ্যান্ডটি মাঠ থেকে সেজান পয়েন্ট পর্যন্ত ফুটপাতের বিভিন্ন খাবার দোকান ও হোটেলে দেখা যায় ‘লতিফ ভাইয়ের’ পানির জার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দোকানি বলেন, “লতিফ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া আর কারও পানি নেওন যায় না।”
অবশ্য লতিফের দাবি, তার পানি ‘ভালো’ বলেই বেশিরভাগ দোকানে নেয়। আরও অনেকে ওই এলাকায় জার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ‘পানিতে সমস্যা থাকায়’ কাস্টমাররা ‘না’ করে দিয়েছে।
“দুইবার মোবাইল কোর্ট এসে পানি পরীক্ষা করেছিল। আমার এখানে কিন্তু কোনো সমস্যা পায় নাই।”
ফার্মগেইগের ফর্মভিউ সুপার মার্কেট থেকে আনন্দ সিনেমা হল হয়ে গ্রিনরোডের জাহানারা গার্ডেন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানি দেওয়া হয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম রানা, বাবুল ও জিয়ার নামে।
রাস্তার পাশে নোংরা পরিবেশে ফেলে রাখা হয়েছে এসব জার (ছবি প্রতিবেদক) রাস্তার পাশে নোংরা পরিবেশে ফেলে রাখা হয়েছে এসব জার (ছবি প্রতিবেদক) তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মার্কেটে তিনটি পানির কারখানার একটি সোহেলের, বাকি দুটি আজাদের। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
সরকার সমর্থক প্রায় ২৫ ব্যক্তি কারওয়ানবাজার এলাকায় জারের পানির ব্যবসায় জড়িত বলে জানান ফুটপাতের দোকান এবং হোটেল রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মীরা।
এদের মধ্যে আবদুল করিম, কালো সোহেল, দেলোয়ার ও মানিকের নাম শোনা গেলেও শ্রমিক লীগের দেলোয়ার ছাড়া কারও পুরো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাতের দোকানে পানি সরবরাহ করেন নুরুন্নবী। তিনি ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মেহেদী হাসান মনিরের ভাগ্নে।
কুড়িল-জোয়ারসাহারা এলাকার ফুটপাত হোটেল রেস্তোরাঁয় চলে ভাটারা থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানার প্রতিষ্ঠান ওয়াটার কমের পানি। বিএসটিআইয়ের ২০৫টি বৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ওয়াটারকমের নাম নেই।
নোংরা জায়গায় ফেলে রাখা এসব জার কারখানায় নিয়ে পানি ভরার আগে ঠিকমতো পরিষ্কার করাও হয় না নোংরা জায়গায় ফেলে রাখা এসব জার কারখানায় নিয়ে পানি ভরার আগে ঠিকমতো পরিষ্কার করাও হয় না বাড্ডার ময়নারবাগ এলাকায় সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মিরাজুল ইসলাম ডলার এবং বিএনপি নেতা সোহেলের দুটি অনিবন্ধিত পানির কারখানা রয়েছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা পিন্টুর বাবা মালেকেরও একটি পানির কারখানা আছে।
মহাখালীর আমতলীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলে বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেলের প্রতিষ্ঠানের পানি। এ বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েক ফোন করলেও ধরেননি ইউসুফ।
সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে মিরপুরের বিশিলে একটি অবৈধ পানির কারখানা সিলগালা করে দেয় বিএসটিআই। অভিযানের দিন কারখানার কর্মচারীরা বলেন, এটির মালিক ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতান।
কারখানা থেকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিভর্তি জার (ছবি প্রতিবেদক) কারখানা থেকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিভর্তি জার (ছবি প্রতিবেদক) তবে টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, তার কোনো পানির কারখানা নেই।
“আমার বন্ধু খোকা ও আমার চাচাতো ভাই কাজী মহসিন মিলে একটি কারখানা চালাতে পারে। সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তো ব্যবসা করি না।”
শাহ আলীবাগ ধানক্ষেত এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় ‘সিকদার ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামে একটি কারখানার পানির জার যায়। দোকানিরা ওই কারখানার মালিক হিসেবে নাম বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতুর।
তবে তিুত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার রুচি এত খারাপ না যে অবৈধ পানির ব্যবসা করে খেতে হবে। ঘটনা হল, আমার ছ্টো ভাই আনোয়ার হোসেন লিটুর কারখানা ওইটা। সেজন্য অনেকে আমার নাম বলে।”
পুরান ঢাকার ৩৫, রাধা সেন স্ট্রিটে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের পানির কারখানা। সেখান থেকে কাপ্তানবাজার, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান ও ওয়ারীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের দোকানে পানি যায়। অনুমোদিত এ কারখানা থেকে অপরিশোধিত পানিও জারে ভরে বিক্রি হয়।
গত ৩১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা ডিটারজেন্ট দিয়ে জার ধুচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে জার পরিষ্কারের যন্ত্র। পরিশোধন না করেই ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি নল থেকে সরাসরি ভরা হচ্ছে জারে।
নল থেকে সরাসরি জারে পানি ভরা হচ্ছে। (ছবি প্রতিবেদক) নল থেকে সরাসরি জারে পানি ভরা হচ্ছে। (ছবি প্রতিবেদক) সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর কারখানার কর্মীরা দ্রুত কল বন্ধ করে দেন। জার পরিষ্কারের যন্ত্র, পানি পরিশোধনের যন্ত্র চালু হয় সঙ্গে সঙ্গে।
ওই কারখানার পানির জারের কোনোটাতেই বিএসটিআইয়ের লেবেল, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পাওয়া যায়নি।
সে সময় কারখানায় ছিলেন না মালিক আবুল হোসেন। ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান বলেন, ওয়ারীতে স্টার হোটেলের কাছে মালিকের অফিস। তবে হোল্ডিং নম্বর জানেন না। মোবাইল নম্বর চাইলেও ‘নেই’ দাবি করে তা দিতে অস্বীকার করেন কারখানার কর্মীরা।
পরে আবুল হোসেনের মোবাইল নম্বর যোগাড় করে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও রমনা এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোয় পানি সরবরাহ করেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য বিল্লাল হোসেন।
পল্টন, বায়তুল মোকাররম, সচিবালয়, প্রেস ক্লাব, সেগুনবাগিচা, হাই কোর্ট, শিল্পকলা একাডেমি, দুদক ও আশপাশের এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানি সরবরাহেও আছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
জারের গায়ে পানি উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই জারের গায়ে পানি উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই এদের মধ্যে পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহীন আরিফ টিটো, লিমুকা সোহেল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রতনের সহযোগী লিয়ন, রাব্বী, ছাত্রলীগ নেতা মুরাদের নাম বলেন দোকানিরা।
লিমুকা সোহেল ও রেজাউল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের ঘনিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন দলটির কয়েকজন নেতা।
শাহীন আরিফ টিটো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এখন আর পানির ব্যবসা করেন না।
“পার্টনারশিপে ব্যবসা ছিল সত্যি। কিন্তু এখন এটা নোংরামির দিকে চলে গেছে। এজন্য এখন ছেড়ে দিয়েছি।”
শ্যাওলাধরা জারেই দেওয়া হচ্ছে পানি শ্যাওলাধরা জারেই দেওয়া হচ্ছে পানি নীলক্ষেত ও গাউসুল আযম এলাকার বিভিন্ন দোকানে পানি যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সার্জেন্ট জহুরুল হল শাখার সভাপতি সোহানুর রহমান এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমানের নামে। এই এলাকায় অন্য কারও পানি ঢুকতে পারে না বলে দোকানদারদের ভাষ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা পানির ব্যবসা করলেও ‘নিয়ন্ত্রণ করার’ বিষয়টি ঠিক নয়।
“আমরা ওখানে গিয়ে কাউকে হুমকিও দেই না অথবা কাউকে বলিও না যে আপনি এইটা করতে পারবেন, ওইটা করতে পারবেন না। দোকানদাররা যে পানিটা বেস্ট মনে করবে ওইটাই তারা কিনবে।”
প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ‘অসহায়’
হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ফুটপাতের দোকানিরা বলেছেন, ব্যবসার সুনামের জন্য তারাও চান ভালো মানের পানি কিনতে। কিন্তু তারা তা পারেন না।
নিজের ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মহাখালী এলাকার একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্ধারিত ডিলারের বাইরে গিয়ে পানি নেওয়ার সুযোগ নাই।
“এলাকার পোলাপান পানি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এছাড়া বাইরের কেউ আসতে পারে না বলে অন্য কোনো পানিও নেওয়ার সুযোগ নাই। আর বুঝেনই তো, পোলাপানের লগে ঝামেলা করলে বিপদ।”
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার চা দোকানি বাবুল মিয়া বলেন, “আমাগো তো কিছু করার নাই। এইহানে একজনের পানি আহে। হেরডা ছাড়া পানি নেওনের সুযোগ নাই।”
দলীয় লোকজনের কারণে ‘আসল’ পানি ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী।
জারের গায়ে পানি উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই জারের গায়ে পানি উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মিরপুরের একজন ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেতাদের ছাড়া পানির ব্যবসা করা যায় না। অনেকে সরাসরি পানির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আবার কেউ অন্যকে ব্যাকআপ দেয়। আবার কারখানা আছে কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় নাই এমন কেউ সরাসরি পানি বিক্রি করতে পারবে না। ডিলারদের মাধ্যমে বেচতে হয়।”
রাজনৈতিক নেতাদের কারণে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার অবস্থায় বলে অভিযোগ করেন মতিঝিলি এলাকার একজন ব্যবসায়ী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন সরাসরি কোনো দোকানে পানি দিতে পারি না। আমাদের ভ্যান আটকায়, পানি ঢুকতে দেয় না। খুব বিপদে পড়ে গেছি, আমাদের ব্যবসা চলে গেছে তাদের হাতে।
“প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করে ভালো মানের পানি দেওয়ার। সেজন্য একটু বেশি দাম দিতে হয়। কিন্তু এদের কারণে সেটা সম্ভব হয় না। তারা ওয়াসার পানি সরাসরি জারে ভরে ১২-১৫ টাকায় বেচে দেয়। এ কারণে হোটেল বা ফুটপাতের দোকানিরা ভালো পানি কেনে না।”
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা লোকজনকে ‘জিম্মি করে’ পানির ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের।
তিনি বলেন, “তারা হোটেল-রেস্তোরাঁয় জোর করে পানি দেয়। সে যে পানি খাওয়াবে তারা সে পানি খেতে বাধ্য, কারণ তারা এলাকার প্রভাবশালী। তারা বিভিন্ন জায়গায় জিম্মি করে ব্যবসা করে।”
‘বেকায়দায়’ বিএসটিআই
অবৈধভাবে কারখানা বসিয়ে দূষিত পানি মানুষকে খাওয়ানো এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গেলে রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকেই বাধা আসে বলে জানান বিএসটিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ফ্যাক্টরিতে গেলেই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হই। আমরা এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারি না, মামলাও করতে পারি না। কিছুই করতে পারি না। আমাদের পিছটান দিতে হয়। যে কারণে আমরা এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গেলেও সাকসেসফুল হই না।”
এসব কারণে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে এখন কারখানায় না গিয়ে পানি পরিবহনের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কৌশল নেওয়ার কথা জানান ওই কর্মকর্তা।
নেতাদের হস্তক্ষেপ হয় বলে কারখানায় না গিয়ে এখন পথে এসব দূষিত পানি ধরার কৌশল নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএসটিআই কর্মকর্তারা নেতাদের হস্তক্ষেপ হয় বলে কারখানায় না গিয়ে এখন পথে এসব দূষিত পানি ধরার কৌশল নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএসটিআই কর্মকর্তারা দূষিত পানি সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক সরদার আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো নতুন জয়েন করেছি। এখন কারা কী, এই জিনিসটা ভালোভাবে ট্রেস না করে… এইটা পরীক্ষা না করে কমেন্ট করা আমার জন্য ঠিক হবে না।
“তবে খাদ্য-পানীয় এসবে ভেজাল রোধে কীভাবে কী করা যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। গতকালও এটা নিয়ে সচিব স্যারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।”
আর বিএসটিআইয়ের পরিচালক মো. ইসহাক আলী ফোন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএসটিআই মোটেই ব্যবস্থা নিতে পারছে না তা নয়। কৌশলে কাজ করছেন তারা।
“আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্যাক্টফুলি ধরে নিয়ে আসছি। আর কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে আমরা পারতেছি না। গতকালও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে জেল দিয়েছি।
“এছাড়া গত সপ্তাহে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ পানির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন