যানজটের তুলনায় রাজধানীতে রাস্তা বাড়ছে না। যানজটে ঝাঁকানি-নাকানির হাত থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে রাজধানীবাসীর জন্য হাতিরঝিলের মতো তৈরি হচ্ছে নতুন জলপথ। লেক সংরক্ষণ, জলযান চলাচল, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ উন্নয়ন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
অপরিকল্পিতভাবে নগরীতে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ভবন। ফলে রাস্তা বাড়ানোর সুযোগও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার রাস্তায় বড় জোর দুই লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারে। বাস্তবে চলছে তার চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি। ফলে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত ঝাঁকানি-নাকানি খেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরে যানজটে যখন নাগরিকদের দুর্বিষহ অবস্থা তখন যাতায়াতের নতুন মাত্রা যোগ হয় হাতিরঝিলে। যেভাবে তৈরি করা হয়েছে হাতিরঝিল, অনেকটা সেভাবেই গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পটির কাজ হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে লেকের পানি সেচে শুকানোর পরে ওই মাটির সঙ্গে বালু মিশিয়ে মেশিনের সাহায্যে ময়লা-মাটি কেটে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। ভালো মাটি দিয়ে লেকের দুই পাড় বাঁধাই হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩টি লেক খনন করা হবে। সেই লেক দিয়েই চলাচল করবে জলযান, তৈরি হবে নতুন জলপথ। রাজধানীবাসীর যাতায়াতে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। লেকের পাড় দিয়ে সড়ক ও ফুটপাত নির্মিত হবে, সেই সঙ্গে থাকবে ব্রিজ।
প্রকল্পটির আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যানজট নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পরিসর অনেক বড়। এ বিশাল পরিসরের প্রকল্পের একটি অংশ ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন’ প্রকল্প। লেক উন্নয়ন হলে এখানে যাতায়াতের জন্য তৈরি হবে নতুন জলপথ। তৈরি হওয়া এ পানিপথ দিয়ে জলযানের মাধ্যমে রাজধানীবাসী চলাচল করতে পারবেন।
জানা গেছে, রাজধানীবাসীর সহজ ও আনন্দময় যাতায়াতে হাতিরঝিলে চালু হয় ওয়াটার ট্যাক্সি। সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সহজে যাতায়াত করতে হাতিরঝিলে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিসটি খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পায়। এ সেবা চালুর পর থেকে সড়ক পথে যানজট থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই যাতায়াত শুরু করেন ওয়াটার ট্যাক্সির মাধ্যমে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের বর্ধিতাংশ অনেকেই বললেও হাতিরঝিলের প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার জানিয়েছেন, এটি হাতিরঝিল প্রকল্পের অংশ নয়, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন নামে আলাদা প্রকল্প। এ প্রকল্পটির একদিকে হবে লেক উন্নয়নের কাজ অন্যদিকে সেই লেকের পানিপথ দিয়ে যেন জলযান চলাচল করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গুলশান-১ থেকে মহাখালী যাওয়ার পথে গুলশান লেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, লেকের একপাশে রাস্তা, অন্য পাশে বাঁধ। রাস্তায় কালভার্টের মুখেও ফেলা হয়েছে মাটি। লেকের পাড় ঘেঁষে গেছে পাইপ, মাটি ফেলানো অংশে বসানো হয়েছে সেচযন্ত্র, দলবেঁধে শ্রমিকরা কাজ করছেন। সব মিলিয়ে চলছে ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ।
সূত্র মতে, তিনটি লেকের প্রথমটি নিকেতনের পুলিশ কনভেনশন সেন্টারের পেছন থেকে শুরু হয়ে বাড্ডা, শাহজাদপুর দিয়ে বারিধারায়, ইউনাইটেড হসপিটাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় শাখাটি নিকেতন থেকে শুরু করে গুলশান, গাউসুল আজম মসজিদের পাশ ঘেঁষে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত। তৃতীয় শাখা নিকেতন থেকে শুরু করে গুলশান, কড়াইল বস্তির ভেতর দিয়ে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত।
ইতিমধ্যে লেক খননের কাজ পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এবং রাস্তার কাজ তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন