তোফায়েল আহমেদের মতো দেশ কাঁপানো ছাত্রনেতা কখনোই ছিলেন না তাঁরা। তোফায়েল আহমেদ তো অনেক দূরের কথা, ছাত্রনেতা হিসেবেও কোনো দ্যুতি ছড়াতে পারেননি তাঁরা। আবার আমীর হোসেন আমুর মতো তিল তিল করে গড়েও ওঠেননি তাঁরা। ছাত্র নেতা, যুব নেতা কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে তাঁদের কোনো কারিশমা নেই। তাদের জন্য কর্মীদের অপেক্ষা নেই। তাদের বক্তৃতা শুনতে উন্মুখ নন শ্রোতারা। তবুও তাঁরা আওয়ামী লীগের মত প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো তাঁরাও নেতা। কীভাবে এরা নেতা হলেন তা নিয়ে খোদ দলের মধ্যেই চর্চা। কিন্তু দলের মধ্যে এদের নিয়ে হাস্যরস কম হয় না। এসব নেতাদের নাম দেওয়া হয়েছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা।
এই গোত্রের নেতাদের নিয়ে আলোচনা হলেই প্রথমেই নাম আসে মাহাবুব উল আলম হানিফের। ২০০৮ সালের আগে তাঁকে আওয়ামী লীগের ক’জনই বা চিনতো। ২০০৮ সালে কুষ্টিয়ার আসন থেকে সরিয়ে শরিক দলের হাসানুল হক ইনুকে দেওয়া হয়। ওয়ান ইলেভেনের পরই গজিয়ে ওঠেন হানিফ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, তারপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ যেন অর্ধেক রাজ্য আর রাজকন্যার মতো ব্যাপার। কিন্তু এত সুযোগ পেয়েও জননেতা হয়ে উঠতে পারেননি হানিফ। বরং কুষ্টিয়াতে ইনুকে বিপদে ফেলাই যেন তার রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য। ডাক সাইটে ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর কবির নানককে পেছনে ফেলে মাহাবুব উল আলম হানিফ কীভাবে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক?- সে প্রশ্নের উত্তর নেই কর্মীদের কাছে।
এই গোত্রের নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় নামটি হলো ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রামে সাদামাটা ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। ছাত্র রাজনীতিতে ভবিষ্যত নেই দেখে গেলেন বিদেশে। ইউরোপ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন। এখানেই দলীয় প্রধানের দৃষ্টিতে পড়েন। ২০০১ এ আওয়ামী লীগের দুর্দিনে শেখ হাসিনা তাঁকে ব্যাক্তিগত স্টাফ করেন। তারপর ২০০৮ এর নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। প্রথমে প্রতিমন্ত্রী, তারপর একলাফে পূর্ণমন্ত্রী। এবার তার মন্ত্রিত্ব নেই, কিন্ত তার অতিকথনের যন্ত্রণা আছে।
আওয়ামী লীগের আরেক গজিয়ে ওঠা নেতা হলেন আবদুস সোবহান গোলাপ। গোলাপও বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী থেকে দপ্তর সম্পাদক। ব্যাস, তাঁকে আর পায় কে। এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটি গঠনে নয়-ছয় করেন তিনি। বিভিন্ন এলাকায় কোন্দল সৃষ্টি, গ্রুপিং সবকিছুতেই গোলাপের নাম জড়িয়ে আছে। এবার উপ-কমিটি নিয়েও গোলাপ আসামির কাঠগড়ায়।
এরকম গজিয়ে ওঠা নেতার তালিকা ছোট নয় আওয়ামী লীগে। এই তালিকা ক্রমাগত বড় হচ্ছে। কর্মীদের প্রশ্ন, নূহ আলম লেলিন কবে থেকে আওয়ামী লীগ করেন? তিনি কিনা প্রেসিডিয়াম সদস্য? ড. দীপু মনির মতো ভাগ্যবান ক’জন? এরকম কটা নামই বা বলা যায়। গজিয়ে ওঠা এসব নেতাদের দাপটে ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল আর ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
বাংলা ইনসাইডার/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন