সাদাকাত সাবরি বিন মমিন, বয়স এখন ৯ বছর। পৃথিবীতে আসার আগেই সে হারিয়েছিল তার জন্মদাতা বাবাকে। তাই বাবার স্নেহ ভালোবাসা পাওয়া হয়নি তার কখনো। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শহীদ হন তার বাবা মেজর মো. মমিনুল ইসলাম। তার ঠিক দু’সপ্তাহ পরেই জন্ম হয় সাদাকাত সাবরি বিন মমিনের।
বাবার ঠিক করা নামেই তার নাম রাখা হয়। সেই পরিচয়েই বেড়ে উঠছে মমিন।
রোববার সকালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শহীদ বাবার কবর জিয়ারতের জন্য এসেছিল মমিন।
সেই সময় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা তার।
বনানী সেনানিবাস কবরস্থানে মমিনের সঙ্গে ছিলেন তার বৃদ্ধ দাদা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম ও চাচা ডা. শাহরিয়ার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মমিন বলে, আমি ভাল আছি। পড়ছি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস টু'তে।
মমিন বলে, বাবাকে কোনদিন দেখেনি। তবে সবাই বলে আমি নাকি বাবার মতো দেখতে হয়েছি।
বাবার কথা কি মনে পড়ে? প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ চুপ করে বলে, আমি তো বাবাকে দেখিই নাই। বাবার আদর, ভালোবাসা, স্নেহময় স্পর্শ কখনো পাইনি। জন্মের পর শুধু জেনেছি বাবা মারা গিয়েছেন।
কিভাবে মারা গিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে চুপ থেকে না সূচক মাথা নাড়ে মমিন।
হয়তো বাবার শূন্যতা বুকে চেপে বসে। তা বুঝেই বোধহয় মমিনের কাঁধে হাত রাখেন দাদা মফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমার দাদু ভাই বড় হয়ে একদিন নিশ্চয় সব জানতে পারবে।
ছেলের কথা মনে হলেই চাপা কান্নায় বুকটা ভারী হয়ে আসে মফিজুল ইসলামের।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, শহীদ মেজর মমিনুল আমার বড় ছেলে! সে ছাত্র জীবনে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করেও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিল।
কিন্তু অকালে তার চলে যাওয়া কখনই মেনে নিতে পারেননি।
‘এই দুনিয়াতে সন্তানের লাশ দেখা বাবার জন্য যে কত বড় কষ্টের তা একমাত্র যার এমন অভিজ্ঞতা হয় সেই ভালো বোঝে।’ এসব কথা বলতে বলতেই চোখ ভিজে যায় তার।
অশ্রু সংবরণ করে মফিজুল ইসলাম বলেন, আমার শহীদ সন্তানের জন্য সবাই দোয়া করবেন। মমিন যেন বাবার যোগ্য উত্তরসুরি হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। এটাই এখন তার একমাত্র চাওয়া।
হত্যাকাণ্ডের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, জড়িতদের বিচার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের আজও শনাক্ত করা যায়নি।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানদের শুরু হওয়া বিদ্রোহ ৩৬ ঘণ্টা পর অবসান হলেও বিডিআর সদর দপ্তরটি পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। সস্ত্রীক বাহিনী প্রধান ও ঊর্ধ্বতন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ এতে নিহত হন ৭৪ জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন