‘বরাক নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা অন্যায় ও অন্যায্য। সুরমা-কুশিয়ারার উজানে টিপাইমুখ বাঁধের নির্মাণ আশঙ্কায় কোটি মানুষের মনে ভীতি জন্ম নিয়েছে।’ নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভা সমাবেশে পরিবেশবাদীরা এসব কথা বলেন।
এ বাঁধ বা ব্যারেজ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক চলাচল বন্ধের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করছেন। তাদের এ সংগ্রামের সহযোগী শক্তি সংস্কৃতিকর্মীরাও। অভিন্ন নদী, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বরাক-সুরমা পাড়ের মানুষদের পানির অধিকার নিয়ে যেন কোনো বিবাদ না ঘটে সে লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রায় ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এই আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর উজানে ভারত একতরফাভাবে একের পর এক বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করছে, যা অন্যায়।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও কথাকলি সিলেট-এর যৌথ উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের মুক্তপ্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা থেকে আগত সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)-এর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সংগঠক রানা ফেরদৌস চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে আসা সাংস্কৃতিক সংগঠক সুব্রত রায়, অলক পাল চৌধুরী ও ড. রাজিব কর, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, সারী বাঁচাও আন্দোলনের আব্দুল হাই আল হাদি, বাপার সংগঠক ডা. তায়েফ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ভারতের শিলচরের সাংস্কৃতিক সংগঠক সুব্রত রায় বলেন, বরাক নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা অন্যায় ও অন্যায্য। রাষ্ট্রের কাঁটাতার বরাক-সুরমা পাড়ের মানুষের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতাকে পৃথক করতে পারেনি। বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশের নদ-নদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার যেকোনো আগ্রাসী চিন্তায় ভারতের সাংস্কৃতিক কর্মীরা লড়বেন।
শিলচরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক সংগঠক অলক পাল চৌধুরী বলেন, অভিন্ন নদী বিরোধের উৎস নয়, সমৃদ্ধির অগ্রদূত। ভাষায়-গানে-কবিতায়-নাটকে-আনন্দে-ভালোবাসায়-কান্নায় নদীপাড়ের অভিন্ন মানুষ আমরা। নদীর পানি নিয়ে কোনো বৈষম্য হোক আমরা চাই না। উজানের নদীতে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির লঙ্ঘন করে বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মাণ করে ভাটির মানুষকে বঞ্চিত করার চেষ্টা অমানবিক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন