কদরুদ্দীন শিশির
মূলধারার বাইরে কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে গত শনিবার থেকে একটি খবর দেখা যাচ্ছে, যার শিরোনাম "কানাডার ফেডারেল কোর্টের নতুন রায়: বিএনপি’র কর্মকান্ড ‘সন্ত্রাস’ নয়!" এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য amadershomoy.com- এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে--
//
"বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং তাতে তাদের চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে আগাম নির্বাচনের দাবিতে ডাকা ‘হরতাল’ কর্মসূচি ‘সন্ত্রাস’ বলে গণ্য হতে পারে না। কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় ‘হরতাল’ শব্দটির প্রায়োগিক বিষয়টি এসেছে মহাত্মা গান্ধীর ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স মুভমেন্ট’ থেকে এবং বাংলাদেশে ক্ষমতাহীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই এই কৌশলটিই অবলম্বন করে। এতে বিএনপিকে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার আগের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল বিচারকের প্রদত্ত রায়টি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তেমন অভিমত ব্যক্ত করে নতুন রায় দিয়েছেন কানাডার সর্বোচ্চ ফেডারেল আদালতের বিচারপতি রিচার্ড জি মোসলে।"
//
মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো খবর না আসায় অনেকের মধ্যে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। 'সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে বিএনপি জড়িত'- ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে কানাডার এক আদালতের এমন মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে উপরিউক্ত খবরটির সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের চেষ্টা করে bdfactcheck.com.
অনুসন্ধানে খবরটির সত্যতা পাওয়া গেছে।কানাডার Federal Court এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখ মামলার চূড়ান্ত রায়ের কপি আপলোড করা হয়।
বিচারক রিচার্ড জি. মোসলে Richard G. Mosley মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। একইসাথে সেসব পর্যবেক্ষণের বিপরীতে মামলার বাদী ‘এ. কে’ (আদালত তার পূর্ণ নাম প্রকাশ করেনি) এর যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে। দুইপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে কানাডার বিভিন্ন আইন ও পূর্ববর্তী এ ধরনের মামলার রায়ের আলোকে বিচারক নিজের চূড়ান্ত রায় দেন। সেখান থেকে তিনটি পয়েন্ট নিচে অনুবাদ করে দেয়া হলো--
[৪১] "সংসদ ভেঙে দেয়া বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার মতো দাবি মানতে ক্ষমতাসীন দলকে বাধ্য করার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক সাধারণ ধর্মঘটের ডাক ‘সন্ত্রাসবাদের বিশ্ব-স্বীকৃত সংজ্ঞায় পড়ে’- এমনটা মানতে আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। এটা বলা অতিরঞ্জন হবে না- যেমনটি বাদীও বিচার চলাকালীন বলেছেন- যে, বিবাদীপক্ষ (রাষ্ট্রপক্ষ) যেভাবে আইনের ব্যাখ্যা করেছেন তাতে সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা না থাকা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। অথচ কানাডাতে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হলে তা ‘কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’ এর এস২ ধারায় সুরক্ষিত থাকতো।"
[৪২] "আমি বুঝতে পারিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা আসলে তার তদন্তে কী পেয়েছেন। কারণ বিএনপি নেতাদের হরতাল আহ্বানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার মন্তব্য নির্দিষ্ট কিছু না বুঝিয়ে একাধিক অর্থ বহন করে।কর্মকর্তা এটা স্বীকার করেছেন যে, দলটির নেতারা সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে তা দেরিতে এবং সহিংসতার পরে হওয়ার বিষয়টিকে তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন। এস.এ (পূর্ববর্তী অন্য এক মামলার বাদী) এর মতো এ ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই যা দিয়ে বুঝা যাবে যে, হরতাল আহ্বান করার মাধ্যমে 'সন্ত্রাসবাদের' সংজ্ঞায় পড়ে এমন কাজ করার আহ্বান করা হয়েছে।"
[৪৩] "ফলে, আমি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নই যে, সিদ্ধান্তটি যথাযথ, স্বচ্ছ এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে নেয়া হয়েছে। এবং আমি এটাও মনে করি না যে, আইন এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণযোগ্য উপায়ে টিকিয়ে রাখা যাবে। এ কারণে আমি বাদীর আবেদনকে (রাজনৈতিক আশ্রয়ের) গ্রহণ করলাম।"
এ রিপোর্টটি শনিবার রাতে লেখার পর (পোস্ট করার আগে) বাংলাট্রিবিউন "বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলতে অপারগ কানাডার আদালত" শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন