ছোট্ট শিশু তামারা প্রিয়ন্ময়ী। বাবা প্রিয়ক ও মা আলিমুন্নাহার অ্যানির সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিল নেপালে। বাবার সঙ্গে আকাশে উড়ে আর ফেরেনি শিশুটি। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বাবার সঙ্গে শিশুটিও মারা যায়। নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়, তাতে অবশ্য অলৌকিভাবে প্রাণে বেঁচে যায় শিশুটির মা অ্যানি।
নেপালের ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহতদের সহযোগিতায় এগিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় চিকিৎসক। সেখানে গিয়ে তারা আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের মরদেহ শনাক্তে ব্যস্ত সময় পার করেন।
দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত করার পর যখন কফিনে করে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন সামনেই ছিলেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসকরা।
ছোট্ট তামারার দেহাবশেষ চোখের সামনে দেখার পর তাদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। অঝোরে কেঁদেছেন কেউ কেউ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক হাসান ইমাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, নেপালে যাওয়ার পর এত মরদেহ দেখেছি আমরা। অথচ ছোট্ট ওই শিশুটির লাশ যখন সামনে আনা হয় আমরা কেউই নিজেদের আবেগ সংবরণ করতে পারিনি। সবার চোখের কোণ ভিজে উঠেছিল কান্নায়। কেউ অঝোরে, কেউ কেঁদেছেন নীরবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় অ্যানির স্বামী ও মেয়ে মারা যাওয়ার পর অ্যানিকে তা জানানো হয় নি। চিকিৎসার জন্য অ্যানি, তার দেবর মেহেদী ও মেহেদীর স্ত্রী স্বর্ণাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
আজ প্রিয়ক ও অ্যানির পরিবার আমাদের ফোন করে জানায়, প্রিয়ক-তামারার লাশ আনা হচ্ছে। তাই তারা অ্যানিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। সেখানে তারা অ্যানিকে সব জানাবে। তখন আমরা পরিবারের স্বাক্ষর রেখে অ্যানিকে ছাড়পত্র দিয়ে গাজীপুরে পাঠাই।
অন্যদিকে মেহেদীকে তার ভাইয়ের জানাজা পড়ার জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে যেতে দেয়া হয়েছে।
ডা. সামন্ত আরো জানান, অ্যানির ফেরার কথা রয়েছে। তবে সে ফের চিকিৎসার জন্য ফিরবে কিনা সেটা তার ও তার পরিবারের উপরই নির্ভর করছে। তবে অ্যানির শারিরীক অবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশনা সেখানকার চিকিৎসকদের অবহিত করা হয়েছে। আর মেহেদীর রাতেই হাসপাতালে ফেরার কথা রয়েছে।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত তিন বাংলাদেশি মেহেদী হাসান, সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও আলিমুন্নাহার অ্যানিকে গত ১৬ই মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি০৭২ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়।
পরে সেখান থেকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে।
বিকেলেই তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ক্যাবিন ব্লকে নেওয়া হয়। আহতরা সবাই একই পরিবারের।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ৭১ আরোহী নিয়ে গত ১২ মার্চ দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।
এতে বিমানের ৫১ আরোহী নিহত হন। উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। এদের ২৬ জনই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন