এবার পরীক্ষিত ছাত্রলীগের নেতারা সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ হচ্ছেন বলে জানা গেছে। আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফের ছাত্রলীগ ও বাম দলের সাবেক নেতারা আধিক্য পাচ্ছেন । ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ীকরণ এবং তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষাতেই ব্যস্ত উচ্চ আদালতে ছাত্রলীগ কিংবা পরীক্ষিত রাম রাজনৈতিক দলের সাবেক ছাত্র নেতাদেরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগে নিরপেক্ষ ও সাহসী বিচারপতি সংকট চলছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং দলীয় দৃষ্টি কোণ থেকে সুপ্রিম কোর্টসহ নিম্ম আদালতে বিচারক নিয়োগের ফলে দেশের মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আইনমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এবার আপিল বিভাগেও দলীয় বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গত ৮ বছরে ১৬ ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়োগ:
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতে ১৬ জন দলীয় নেতাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তারা অনেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় পদ ও পদমর্যাাদায় ছিলেন । বিচারপতি নিয়োগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের অধিক্য বেশি রয়েছে বলে উচ্চ আদালতের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে । তাদের মধ্যে প্রায় ১০ জনকে এক সঙ্গে গত ২০১০ সালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে দলীয়করনের প্রতিবাদে সিনিয়র আইনজীবীরা দফায় দফায় প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করেন। চরম দলীয়করনের ব্যাপারে সিনিয়র আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি আ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশের এ চরম দু:সময়ে বিচারবিভাগের এ ধরনের ঘটনায় তিনি কথা বলতে রাজি নন। তবুও তিনি বলেন,’ বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। বিচারবিভাগকে কলুষিত করে রেখে গেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ.বিএম খায়রুল হক । কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার আসার পরে বিচার বিভাগের এ চরম সংকট কেটে যাবে। ‘
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং আওয়ামীলীগের সাবেক ডেপুটি এর্টনি জেনারেল ( ডিএজি) ছিলেন। এর আগে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। তাকে ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর নিয়োগ দেয় সরকার। বিচারপতি এ.বি.এম.আলতাফ হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোর্টের ডেপুটি এর্টনি জেনারেল ছিলেন। তিনি নিয়োগ পান ২০১২ সালের ১৪ জুন।
রুহুল কুদ্দুস বাবু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা এবং জিএস ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ১৭ মে শিবির কর্মী আসলাম ও আসগর হত্যা মামলার আসামী ছিলেন। রুহুল কুদ্দুস বাবুকে
বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়ার এক দিন আগে ওই খুনের মামলার প্রধান আসামী থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহার করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি এক ছাত্র হত্যার প্রধান আসামী ছিলেন। মামলাটি এখনো চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। চুড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই বিচারাধীন মামলায় প্রধান আসামী থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের পর দিন বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগের প্রায় ৬ মাস পর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়ে তাদের শপথ দেন। এর আগে প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম দায়িত্বে থাকা কালীন পর্যন্ত ৬ মাস তাদের দুই জনকে শপথ দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
বিচারপতি মোহম্মদ উল্লাহ ( কিসলু) ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। তাকে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর।
বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী কুদ্বিয়া জেলা আওয়ামীলীগের জয়েন্ট সেকেদ্ধটারী এবং তার আগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদকীয় পদের নেতা ছিলেন। তাকে আওয়ামীলীগ সরকার নিয়োগ দেয় ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল।
বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি সুপ্রীমকোর্ট বার আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ৪ বছর আগে। তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আবু জাফর সিদ্দিকীর সগ্ধেগ একই সময়ে ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরকে ও একই দিনে বিচারপতিস হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামীলীগ সরকার। গোবিন্দ চন্দ্র ছাকুর মানিকের আদালতের আরেক দোসর । নিয়োগ পাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরে হত্যা মামলা ছিল। বিচারপতি মো: নিজামুল হক স্কাইপি সংলাপ কেলেংকারীর সঙ্গে জড়িত। বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ( সানা) ও বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি কে.এম.কামরুল কাদের তিনজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলে জানিয়েছেন আদালতের সংশ্লিষ্ঠ সূত্র। আকরাম হোসেন চৌধুরীকে ২০১০সালের ১২ ডিসেম্বর নিয়োগ দেয়া হয়। কামরুল কাদেরকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৩ সালের ১০ জুন। বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ( খসরু) সুপ্রীমকোর্ট বারের আওয়ামীলীগ পক্ষের নির্বাচিত সহ সম্পাদক ছিলেন। তাকে সরকার নিয়োগ দেয় ২০১২ সালের ১৪ জুন। বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেন হোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া আওয়ামীলীগ নেতা এবং বিচাপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও আওয়ামীলীগের পদ পদবীতে ছিলেন নিয়োগ পাওয়ার আগে।
উচ্চ আদালতে আ’লীগের যত আত্মীয় -স্বজন:
বিচারবিভাগের কয়েকটি সূত্রের কাছ থেকে নেয়া তালিকা অনুযায় দেখা যায়, সরকারের প্রথম ৫ বছরেই ৬জন বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন শুধুমাত্র সরকারের ঘনিদ্বজন ও মন্ত্রী- এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আধিক্য থাকায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত তালিকা থেকে জানা গেছে, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আওয়ামীলীগ এমপি ফজলে রাব্বির মেয়ে জামাই। তিনি ২০১১ সালে নিয়োগ পেয়েছেন। স্থায়ীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন চলতি বছরের গত ৬ অক্টোবর তারিখে। এর আগে তিনি সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন।
বিচারপতি এ.কে.এম.সাহিদুল হক সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের শ্যালক। তিনি বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর। এ.এক.এম সাহিদুল হক এর আগে হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন।
বিচাপতি মো জাহাঙ্গীর হোসেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ভাগ্নি জামাই। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ সময় তাকে প্রায় আড়াইশো সিনিয়র জেলা জজকে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় বির্তকের ঝড় ওঠে । যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বিচারপতি মো:খসরুজ্জামান সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ( আওয়ামীলীগ আইনজীবী) সাবেক বিচারপতি মেজবাহউদ্দিনের মেয়ের জামাই। বিচারপতি খসরুজ্জামানকে ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় । তার আগে খসরুজ্জামান ২০০৬ সালের ২৯ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীদের নেতৃত্বে ভাংচুরে সক্রিয় অংশ নেয়ার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
এছাড়াও আরো দুই বিচারপতির মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি কাজী মো:ইজারুল হক আকন্দ পঞ্চগড়ের এমপি গোলাম মোস্তফা সুজনের ভাতিজি জামাই। তিনি গত ২০১২ সালের ১৪ জুন বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পয়েছেন। তার আগে তিনি সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। বিচারপতি এ.কে.এম জহিরুল হক ২১ আগষ্ট গেনেড হামলায় আহত ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের পিতা। বিচারপতি জহিরুল হক গত ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ পেয়েছেন। তার আগে তিনি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন।
আপিল বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য তালিকা :
আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র চারজন। এক সময় দুই থেকে তিনটা পূণাঙ্গ বেঞ্চ গঠনের টার্গেট ছিল এবং দুইট পূণাঙ্গ বেঞ্চ ছাড়াও সিঙ্গেল বেঞ্চ মামলার শুনানি গ্রহণ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সরকার হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতিদের মধ্য থেকে পরীক্ষিত আওয়ামী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদেরকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিধিমালা অনুযায়ী ১০ বছর হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে রয়েছেন এমন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু আইনমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি পরিক্ষীত ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা তৈরী করছেন আপলি বিভাগে নিয়োগের জন্য।
আর ছাত্রলীগ ও বামদলের সম্ভাব্যদের মধ্যে শোনা যায়, ২০০৯ সালে ৩০ জুন দুই বছরের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী, বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি রেজাউল হাসান, সৌমেন্দ্র সরকার ও নায়মা হায়দারসহ আরো কয়েক জন। দুই বছর পর ২০১১ সালে ৩০ জনু তাদেরকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের অবসরে যাবার তারিখ ২০২৭ সালের ২০ আগস্ট, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের অবসরে যাবার তারিখ ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর অবসরে যাবার তারিখ ২০২১ সালের ২৮ জুলাই, বিচারপতি নুরুজ্জামানের অবসরে যাবার তারিখ ২০২৩ সালের ৩০ জুন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর অবসরে যাবার তারিখ ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল, বিচারপতি রেজাউল হাসানের অবসরে যাবার তারিখ ২০২৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের অবসরের তারিখ ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর এবং বিচারপতি নাইমা হায়দারের অবসরের তারিখ ২০২৯ সালের ১৮ মার্চ।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানান যায়, ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে বেশ কিছু নিরপেক্ষ,অভিজ্ঞ মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন সাহসী বিচারপতি চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবসর গ্রহণ আবার অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে গেছেন। আবার অনেকে চাকরির মেয়াদ থাকা অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন এবং আরো বেশ কয়জন অসুস্থ থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারিক কাজে অংশ নিতে পারচ্ছেন না।
আপিল বিভাগের যত ঝড়:
আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র চারজন। এক সময় দুই থেকে তিনটা পূণাঙ্গ বেঞ্চ গঠনের টার্গেট ছিল এবং দুইট পূণাঙ্গ বেঞ্চ ছাড়াও সিঙ্গেল বেঞ্চ মামলার শুনানি গ্রহণ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিচার বিভাগের স্বার্থে করা এক মামলায় ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর সরকারের রোষানলে পড়েন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। পরে গত নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো এবং দেশের বাইরে পাঠিয়ে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার ন্যাক্কাজনক ঘটনা দেশ বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। অথচ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার চাকরির মেয়াদ ছিল গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর সিনিয়র বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি এবং রায় ঘোষণা করান। কিন্তু মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ না দেয়ায়, তিনি বাধ্য হয়েছেন স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে। অথচ তার চাকরির মেয়াদ ছিল আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে আপিল বিভাগে ৪ বিচারপতির মধ্যে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আছেন। অপর তিন বিচারপতি হলেন, বিচাপতি মো. ঈমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার। সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের এই চার বিচারপতির ওপর বিচারাধীন মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের আজ্ঞাবাহ এমন বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের চেষ্টায় রয়েছে সরকার। বিচারপতি নিয়োগে সরকার কোনো নীতিমালা তৈরি করেনি ইচ্ছে করেই। যার ফলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় ক্যাডারদের বিচারক (বিচারপতি) নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
হাইকোর্টের বর্তমান অবস্থা :
এদিকে হাইকোর্টে বর্তমানে ৮০ জন বিচারপতির রয়েছেন। এরমধ্যে অবসরে যাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়জন বিচারপতি। ৫ লাখের অধিক বিচারাধীন মামলা রয়েছে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, দ্রুত নিরপেক্ষ, সৎ,সাহসী, মানবিক ও গুনাবলী সম্পন্ন বিচারপতি নিয়োগ না দিলে বিচার বিভাগের মর্যাদা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলাজট আরও তীব্র হবে। এতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বিচার প্রার্থীরা। তবে গণমাধ্যমকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, বিচারপতি নিয়োগে আইন তৈরি করে অচিরেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
আরও জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংকট কাটাতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ৮জন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ, যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও এখন আছেন ৪ জন, যাদের মধ্যে দুজন বিচারপতি অবসরে যাবেন অল্প সময়ের মধ্যে। ২০১৬ সালে আপিল বিভাগের জন্য নতুন এক এজলাস কক্ষ তৈরি করা হলেও বিচারক কম থাকায় এখনও ব্যবহার করা যায়নি।
জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমেরিকায় ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন, ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক। জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।’
অপরদিকে সরকার বিরোধী মতাদর্শের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যে মামলার চার্জশীট নিম্ম আদালতগুলো আমলে নিয়ে একপেশী বিচার কার্য পরিচালিত হচ্ছে বলেও বিচার প্রার্থীদের অভিযোগ।কিন্তু বিচারিক আদালতের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেও তেমন একটা সুফল পাচ্ছেন না দেশের বিচারপ্রার্থী ও তাদের স্বজনরা।
সূত্র: নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আওয়াজবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন