মায়ানমারের পার্লামেন্ট স্পিকার উ উইন মিন্ত পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব নেয়ার দু’বছর পর তিনি পদত্যাগ করলেন।
বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে ডেপুটি স্পিকার থি খুম মিয়াত এ পদত্যাগের কথা জানান। খবর সিনহুয়ার।
উ উইন মিয়াত ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাউস অব রিপ্রিজেন্টেটিভের স্পিকার নির্বাচিত হন।
মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি থিন কিউয়ের পদত্যাগ
মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি থিন কিউয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে কী কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা চানা যায়নি।
দেশটির রাষ্ট্রপতি দপ্তরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, অবসর সময় কাটাতেই থিন কিউয়ে আজ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসে। ২০১৫ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি এই বিজয় পায়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে থিন কিউ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মাথায় পদত্যাগ করলেন থিন কিউ।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর মায়ানমারের বেসামরিক রাষ্ট্রপতি হন থিন কিউ।
২০১৫ সালের নভেম্বরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে।
থিন কিউ সু চির ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই থিন কিউ বলেন, ‘এ বিজয় বোন সু চির।’
সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে বিধিনিষেধ থাকায় নিজে রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি এনএলডি নেত্রী সু চি।
মায়ানমারের রাখাইন বর্তমান বিশ্বের কসাইখানা: জাতিসংঘ
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভয়াবহ কসাইখানায়’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন।
রাখাইনসহ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও শুরুতেই এসব প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কিছুই করা হয়নি।
সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৭ তম অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় জেইদ রা’দ আল হুসেইন এসব মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার অবরুদ্ধ পূর্ব ঘৌটা, কঙ্গোর ইতুরি ও কাসাইস, ইয়েমেনের তাইজ, বুরুন্ডি ও মায়ানমারের উত্তর রাখাইন সাম্প্রতিক বিশ্বে ভয়াবহতম কসাইখানায় রূপ নিয়েছে।’
খুব শিগগির জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান হিসেবে তার মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে। মার্চ সেশনে এটাই তার শেষ বক্তব্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাইকমিশনার হিসেবে দেওয়া শেষ বক্তব্যে তিনি স্পষ্টবাদী হতে চান।’ এসময় তিনি হত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন।
মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে ও পঙ্গু করে তারা যেমন অপরাধী ঠিক সেভাবেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যারা মানুষের যন্ত্রণাকে দীর্ঘায়িত করতে দিয়েছে তার দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সাথে অমানুষের মত আচরণ করা হয়েছে। নিজ বাড়িতে তাদের হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি প্রশ্ন করেন, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তারা কেন এটা থামেতে কার্যকর কিছু করল না?
‘নিরপরাধ মানুষের চূড়ান্ত যন্ত্রণা কমাতে যখন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ঠিক তখনই ভেটো প্রয়োগ করে সেই পথ বন্ধ করা হয়েছে।’
নিপীড়িত মানুষের সামনে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রকে এর জন্য অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে বলে মানবাধিকার হাইকমিশনারের মন্তব্য।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তালিকায় যাদের নাম, তারাই কিছু জানেনা?
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
এসব বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে আট হাজারের মত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজী হয়েছে মায়ানমার সরকার।
একই সাথে জিরো লাইনে আটকে পড়া আরো সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষকে তারা ফিরিয়ে নেবে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। খবর বিবিসির
কিন্তু সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া কতটা সহজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সাবিনা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন গত বছর অগাস্টের শেষ সপ্তাহে। স্বামীকে হত্যার পর দুই সন্তান নিয়ে তিনি পালিয়ে আসেন জীবন বাঁচাতে।
কিন্তু প্রায় ছয় মাস কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার দেশ মায়ানমারের মংডুতে ফিরে যাওয়ার।
তিনি বলছিলেন ‘আমাদের সেখানে জমি-জমা আছে। যদি ঘরবাড়ি এখনো অবশিষ্ট থাকে আর আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হয় তাহলে আমি অবশ্যই ফিরে যেতে চাই’।
সাবিনার মত আরো অনেকেই বলছেন যে তারা তাদের দেশ মায়ানমারে ফেরত যেতে চান।
তেমনি একজন কুতুপালং ক্যাম্পের সেলিম মোহাম্মদ।
তিনি বলছিলেন ‘রিফিউজি হওয়া তো আমাদের উদ্দেশ্য না। মায়ানমার যদি নিরাপদ হয় তাহলে আমরা চলে যাবো। আমাদের সেখানে জমি-জমা বুঝিয়ে দিতে হবে, ঘর বাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। শুনেছিলাম আনান কমিশনের একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের সেখানে অসুবিধা হবে না বলে মনে করি’।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি হিসেবে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলে এসেছে মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে কিন্তু দিন শেষে তাদের নিজের দেশ অর্থাৎ মায়ানমারে ফেরত যেতে হবে।
ছয় মাসে সেই ফেরত যাওয়া বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কতখানি এগিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গতবছরের ২৩শে নভেম্বর একটি সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মায়ানমার।
যাকে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অফ ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ বা রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিরিয়ে আনার সমঝোতা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এরপর এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে মায়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এক চুক্তি হয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৩০০জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে।
যেদিন থেকে যাওয়া শুরু হবে, তার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ হবে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন।
কিন্তু দফায় দফায় এসব বৈঠক আর চুক্তি হলেও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা আসলে কী?
জবাবে কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘এখানে এত অধৈর্য হলে চলবে না। এটি একটি আলোচনা শুরু হয়েছে, অগ্রসর হয়েছে এবং আমরা মাঝপথে আছি। হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এর আগেও আমাদের দেশে এমন সমস্যা হয়েছে তখনো সময় লেগেছে। এখন যেহেতু সমস্যাটা বেশি তাই সময়টা একটু বেশি লাগবে’।
কিন্তু তালিকায় থাকা সবাই কি জানে যে তাদের ফেরত পাঠানো হবে?
জবাবে কালাম বলছেন ‘আট হাজার ৩২ জনের যে তালিকা মায়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে সে সম্পর্কে তালিকায় থাকা মানুষেরা কিছুই জানেন না। মায়ানমার অনুমোদন করলেই সেটা তাদের জানানো হবে’।
অর্থাৎ তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা আদৌ যেতে চান কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
মায়ানমার রোহিঙ্গা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রধান রকিবুল্লাহ বলছেন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে খুব কম তথ্য আছে। অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না।
রকিবুল্লাহ বলছেন ‘এসব আলাপ আলোচনার সময় আমরা যারা রোহিঙ্গা লিডার আছি তাদের সাথে নিতে হবে বলে আমরা মনে করছি। কারণ আমরা যেতে চাই কিনা, কিভাবে যেতে চাই সেটা আমাদের কাছে তাদের জানা দরকার’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে একটা সন্দেহ আছে এই প্রত্যাবাসন নিয়ে কারণ আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। যখন তথ্য থাকবে তখন হয়ত এই সন্দেহ থাকবে না’।
রকিবুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে থাকতে চাই না কিন্তু সঠিক ভাবে আমাদের সব অধিকার নিশ্চিত করে তারপর ফেরত পাঠাতে হবে’।
এদিকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, মায়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে আটকে পড়া প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে মায়ানমার ফেরত নিতে রাজি হয়েছে।
তবে সব কিছুই এখনো আলাপ আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, চূড়ান্ত ভাবে প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হতে আরো সময় ব্যয় হবে সেটা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন