ফেসবুকের পাঁচ কোটির বেশি গ্রাহকের তথ্য বেহাত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়েছে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীরা ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়া নিয়ে ফেসবুক এখন অসম্ভব চাপের মুখে। এ নিয়ে মার্ক জাকারবার্গকে পড়তে হয়েছে তদন্তের সামনে। ঠিক এই অবস্থায় ফেসবুকের বর্তমান এবং ভবিষ্যত অবস্থা কেমন হতে পারে তা নিয়ে ভাবছেন গোটা বিশ্ব।
কী বলছেন জাকারবার্গ?
এই ঘটনায় জাকারবার্গকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানির জন্য হাজির হতে হবে। এ প্রসঙ্গে জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকের তথ্যের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্রের বিষয়টি তদন্ত করতে সরকার এখন উপযুক্ত অবস্থায় আছে। যদি সঠিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়, তবে তিনি সানন্দে শুনানিতে রাজি হবেন।
তারা ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে—এমন তথ্য ফাঁস হলে আলোড়ন শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন তারা `ভুল করেছেন`। ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
গ্রাহকের অজ্ঞাতে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের তথ্য ব্যবহার করার এই খবর প্রচারের পর জাকারবার্গকে ব্রিটিশ সংসদে তলব করা হয়।
জাকারবার্গ এ বিষয়ে তাদের ভুল হয়েছিল স্বীকার করে গ্রাহকদের তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে যাওয়াকে `গ্রাহকদের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ` বলে মনে করেন। বিভিন্ন অ্যাপ ভবিষ্যতে যাতে ফেসবুককে ব্যাবহার করে গ্রাহকদের তথ্য সহজে হাতিয়ে নিতে না পারে সেজন্য সামনের দিনগুলোতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও বেশকিছু পরিবর্তনের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
শেয়ার ধস
তবে সংশয়ের কথা হলো, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা বিষয়ে তথ্য প্রকাশের পরই ফেসবুকের শেয়ারমূল্যে ব্যাপক ধস দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার এর শেয়ারদর ৩ শতাংশ কমে গেছে। এর আগের দিন অর্থাত্ সোমবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য ৭ শতাংশ কমেছে, যা ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন। এরই মধ্যে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিচালনা পর্ষদ এর সিইও অ্যালেকজান্ডার নিক্সনকে বরখাস্ত করেছে।
ব্যবহার
এই অবস্থায় তাদের ব্যবহারকারীর পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফেসবুকের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিউজফিডে পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ফেসবুকে এমনিতেই আকর্ষণ হারাচ্ছেন। এমনকি ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এখন আবার তথ্য চুরির ঘটনায় টুইটারে ডিলিট টুইটার নামের হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচার চলছে। জাকারবার্গ এ নিয়ে বলেছেন, খুব অল্প সংখ্যক ব্যবহারকারীই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছে।
এখন আরও আলোচনা এসেছে ফেসবুকের ব্যবসার মডেল। জাকারবার্গ ব্যবসা মডেলের বিভিন্ন সমালোচনার উত্তরে বলেছেন, বিনামূল্যে বা কম খরচে ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হলে এ রকম ব্যবসা মডেল উপযুক্ত। ফেসবুককে বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী থাকতে হবে। তাই আগের পদ্ধতিই থাকবে তাদের।
যেহেতু এর সঙ্গে রাজনীতির মতো বিষয়ও জড়িত, তাই রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভোটের সময় ফেসবুকের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিবিদেরা ক্ষুদ্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ফেসবুকের সমালোচনা করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পদক্ষেপ
এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিস্থিতিতে ফেসবুক একটি ভুল করে ফেলেছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। ২০১৪ সালে ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে নিয়মনীতির পরিবর্তন আসার আগে যে অ্যাপগুলো ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে ফেসবুক।
আর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপর তাদের তথ্যের নিরাপত্তা থাকবে বলে জানা গেছে। এখন থেকে নিউজফিডের উপরে একটি টুল দেখানো হবে। এ টুল থেকে সহজেই থার্ড পার্টির বিভিন্ন অ্যাপ মুছে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে ব্যবহারকারীর তথ্য ডেভেলপাররা নিতে না পারেন, তাতে বাধ্যবাধকতা আসবে। যেসব ডেভেলপার ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার করবে তাদের বাতিল করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবহারকারীকে তা জানানো হবে। এখন এই পদক্ষেপগুলো চলমান পরিস্থিতিতে কীভাবে কতোটা কাজে আসবে সেটা দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন