মার্কিন অস্ত্র কেনা তার এই সফরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু বলা হচ্ছে এ সফরে কথিত সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সৌদি-মার্কিন ঐক্য এবং ইরানের হুমকি মোকাবেলার বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন সালমান। তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নৈশ-ভোজে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের কাছে একটি বড় কাগজ দেখান যেখানে ছিল রিয়াদের কাছে বিক্রি-করা মার্কিন অস্ত্র-শস্ত্রের ছবি। এইসব অস্ত্র বিক্রির ফলে কতজন মার্কিন নাগরিকের চাকরি সৃষ্টি হবে তা ব্যাখ্যা করেন ট্রাম্প। সৌদি অর্থের একটা অংশ যেন মার্কিন অস্ত্র কেনায় ব্যয় করা হয় যুবরাজকে সেই অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ওদিকে ২০১৯ সাল থেকে সৌদি তেল কোম্পানি আরামকোর ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়তে চাচ্ছে রিয়াদ। এইসব শেয়ারের মূল্য হবে ১০ হাজার কোটি ডলার। এর আগে কখনও সৌদি সরকার এত বেশি মূল্যের শেয়ার বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেয়নি।
দৈনিক রাই আল ইয়াওম-এর সম্পাদক আবদুল বারি আতওয়ান সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের কাছ থেকে ট্রাম্পের অর্থ আদায়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি এই দৈনিকে লিখেছেন: এর আগেও ট্রাম্প সৌদি আরব সফরের আমন্ত্রণের জবাবে বলেছিলেন, রিয়াদে আমার সফরের শর্ত হল সৌদি সরকারকে হাজার হাজার কোটি ডলারের মার্কিন অস্ত্র কিনতে হবে এবং আমেরিকায় সৌদি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। সৌদিরা শর্ত মানায় ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর প্রথম বিদেশ সফরের স্থান হিসেবে বেছে নেন রিয়াদকে। ওই সফরেই রিয়াদের কাছে ১১ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন অস্ত্র বিক্রির চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে সৌদি যুবরাজসহ কয়েকজন রাজকীয় কর্মকর্তা
ট্রাম্প এর আগে একবার বলেছিলেন, সৌদি আরবসহ ধনী আরব সরকারগুলো হচ্ছে আমাদের জন্য দুধ দানকারী গাভী। ওরা যতদিন দুধ দেয় ততদিন ওদেরকে পুষতে হবে।
এটা স্পষ্ট ধনী আরব দেশগুলোকে দোহন করা মার্কিন সরকারের কাছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি জরুরি! তাই সৌদি সরকার স্বদেশে কিংবা ইয়েমেনে নিরীহ মানুষের রক্তগঙ্গা বইয়ে দিল কিনা সেটা ওয়াশিংটনের দেখার বিষয় নয়! অর্থ আছে বলে সৌদি আরব যেন গণতন্ত্রের সূতিকাগার!
চলতি বছরের এক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে: সৌদি আরবে আধুনিকায়ন ও সংস্কার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হল সেখানে সরকার-বিরোধী যে কোনো ডাক ও বক্তব্যকে গলা চিপে ধরা হয়।
এ সংস্থার কর্মকর্তা নিনা ওয়ালশ বলেছেন, ময়দানের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসি অস্ত্র দিয়ে ইয়েমেনের বেসামরিক জনগণকে হত্যা করছে সৌদি সেনারা। এভাবে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ-অপরাধ ও অমানবিক তৎপরতা চলতে থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সমাজ কোনো শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না এবং অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সৌদি রাজসরকারের অর্থ ও পেট্টো-ডলার হয়তো কিছুকালের জন্য বিন সালমানের অশুভ তৎপরতা বা ষড়যন্ত্রগুলোকে এগিয়ে নেবে। কিন্তু এ অবস্থা চিরকাল থাকবে না। আর ভবিষ্যতই তা বলে দেবে। #
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন