আগামী একাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩শ’ আসনে দলের নেতাদের টিকিট নিশ্চিত করলেও মহাজোটের অধীনে দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে ২৬০ আসনে প্রার্থী থাকছে না! আসন্ন একাদশ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মহাজোটের অধীনে ভোট করার সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পার্টির। জাপার দুই শীর্ষ নেতা মানবকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রংপুর বিভাগ ছাড়া কোথাও জাপার অবস্থান নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩৪টি আসনে জাপার এমপিরা নির্বাচিত হলেও এসব আসন হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দখলে থাকা। বাস্তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও একটিতেও এককভাবে জেতার সম্ভাবনা নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন,
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও ৩৪টি আসনের মধ্যে ৪-৫টি ছাড়া কোথাও জাপার অবস্থান নেই। দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, মহাজোটকে শক্ত ও সরকারে আবার ক্ষমতায় আসীন হতে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে পারে। তাও ২০০৮ সালের নির্বাচনের জরিপের প্রেক্ষিতে।এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনী কয়েকটি দলীয় সমাবেশে মহাজোট থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সরকারের পক্ষে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা অব্যাহত রাখছেন। আর মাঠের বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সরকারে থাকাকালীন তার অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার রয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের আগে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেছিলেন, জেলে যাচ্ছেন।
জেল কেমন এখন বুঝবেন, আমি জেলে থাকা অবস্থায় মিষ্টি চেয়েছিলাম, আমাকে একটি মিষ্টি পর্যন্ত খেতে দেননি। গভীর দুঃখ থেকে তিনি বিগত সময়ে বিভিন্ন সমাবেশে এসব কথা বলে আসছেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।অপরদিকে গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর জয়ের পর চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন রংপুর বিভাগের নেতারা। সে কারণে একচেটিয়া একাধিক আসনে আওয়ামী লীগ জাপাকে ছাড় দিতে পারে। রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের অন্য জেলাগুলোর কোনো আসনে একক নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দলটির। এমনটি মনে করছেন জাপার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। সেজন্য অনেকে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির তৎপরতা দেখালেও বাস্তবে টাকা পয়সা খরচ করছেন না কোনো নেতাই। জাপার ৩৪ জন সিটিং এমপির মধ্যে ৭-৮ জন ছাড়া বাকিরা এলাকাবিমুখ। একইসঙ্গে সংরক্ষিত ৬টি নারী আসনেও জাপার অবস্থান একবারেই নেই।
দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, গেল নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচন সেভাবে হবে না। তাই অনেকে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নিজেদের পকেট ভারি করতে ব্যস্ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ নেতা বলেন, ওপরে ওপরে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা না ছাড়লেও ভেতরে ভেতরে তারা ঠিকই বুঝছেন আগামীতে তারা প্রার্থী হচ্ছেন না। এ আশঙ্কা থেকে নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নেয়া ছেড়ে দিয়েছেন সব নেতাই।অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে যেসব নেতা নীতি নির্ধারণে জড়িত থাকবেন তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংগঠনের কার্যক্রম-জনসমর্থন না থাকলেও মহাজোটের মনোনয়ন পেতে পারেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মসিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমাম, তাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ বেশ কয়েক নেতা। বাকিদের বার্গিনিংয়ের মাধ্যমে জোটের মনোনয়ন নিয়ে দিতে পারেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
যেসব জেলাতে জাতীয় পার্টির আধিপত্য ও সাংগঠনিক শক্তি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে গ্রুপিং থাকবে সেগুলোকে টার্গেট করে মহাজোটের কাছে প্রায় ৭০ আসনের দাবি জানাবেন জাপা চেয়ারম্যান।এ তথ্য মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন এরশাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সময়মতো এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন জাপা চেয়ারম্যান।দলটির একটি সূত্র জানায়, স্বাভাবিকভাবে মনোনয়ন পাবেন রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মিনসিংহ-৪ বেগম রওশন এরশাদ, লালমনিরহাট-৩ জিএম কাদের, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-১ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতœা, নীলফামারী-৪ আসনে আলহাজ শওকত চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৩ মুজিবুল হক চুন্নু, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ একে এম সেলিম ওসমান, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রমুখ।
দলটির অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, আগামীতে মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন না ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদ, বগুড়া-২ আসন থেকে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসন থেকে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ আসন থেকে অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, জাপামালপুর-৪ থেকে মামুনুর রশীদ, ময়মিনসিংহ-৫ থেকে সালাহউদ্দীন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৭ থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাগারে আটক এম এ হান্নান, নারায়ণগঞ্জ-৩ থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্, সিলেট-২ মো. ইয়াহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ মো. সেলিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ-১ মুনিম চৌধুরী বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, কুমিল্লা-২ মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, কুমিল্লা-৮ মো. নুরুল ইসলাম মিলন, লক্ষ্মীপুর-২ মোহাম্মাদ নোমান ও কক্সবাজার-১ হাজি মো. ইলিয়াস। এদের কাউকে আগামী একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী করা হচ্ছে না। দলটির একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে কয়েকজন বিশেষ বিবেচনায় তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত জোটের একাধিক আসনে যখন উš§ুক্ত ভোট করার সিদ্ধান্ত দেবে তখন অনেকের ভাগ্য খুলতে পারে। এ ছাড়া ৪০টি আসনের মধ্যে সিলেটে-১টি, ফেনীতে-১টি আসনে জাপাকে মনোনয়ন দিতে পারে মহাজোট। তবে নির্দিষ্ট করে এ দু’টি আসনের কথা এখন পর্যন্ত বলা হয়নি।দলটির আরেক সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি আসনে মহাজোটের প্রার্থীর জন্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ নতুনদের স্থান দিতে পারেন। সেসব আসন এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি। একইভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, মাহজাবীন মোরশেদ, মেরিনা রহমান, রওশন আরা মান্নান, শাহানারা খোরশেদ আরা হক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হলেও আগামীতে তাদের স্থানে নতুনদের স্থান দিতে পারেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের নেতাদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন