নতুন বার্তা’ দেবেন জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় পুরনো কথাই বললেন সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে জনসভায় এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘বয়স হলেও আমার মাথা ঠিক আছে।’ আর গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যা বলে আসছিলেন, তার বাইরে এটিই নতুন কথা হয়ে থাকল।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেয়া নেতাকর্মীরা এরশাদের ‘মাথা ঠিক থাকার’ আর বহুবার ঘোষণা করা ‘ক্ষমতায় ফেরার’ ঘোষণা নিয়েই ফিরে গেছেন।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে সেনা শাসন জারি করেন সে সময়ের সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর প্রায় নয়টি বছর বাংলাদেশে চলে তার শাসন।
এর মধ্যে ক্ষমতায় থেকে আগের সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের আদলেই দল গঠন করেন এরশাদ। যদিও ৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে তার দল।
এর মধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করার সুযোগে জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে। এখন আগামী নির্বাচনে জিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যাগরিষ্ঠদের দল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এরশাদ।
অবৈধ ক্ষমতা দখলের সেই দিনটিতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় এরশাদ সেই স্বপ্নের কথাই আবার তুলে ধরেন। দাবি করেন, জনগণ তাকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে।
পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই জনসভায় নেতাকর্মীরা আসে সারা দেশ থেকেই। সকাল দশটার মধ্যেই ময়দান ভরে যায়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লোক সমাগমের ঢেকুরও তোলেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
লোকসংখ্যা দেখে নিজের বক্তৃতার এক পর্যায়ে আবেগে জাপার চেয়ারম্যান নিজেই বলেন, তার জীবনে এতো মানুষের সমাবেশ দেখেননি।
সকাল সাড়ে নয়টায় জনসভা মঞ্চে আসেন এরশাদ। আর বক্তব্য শুরু করেন সোয়া বারোটার দিকে।
এরশাদ প্রায় বারো মিনিটের বক্তৃতায় পুরনো কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললেন, সাবেক সেনা শাসক। এর মধ্যে একটি বিষয়ই পাওয়া গেল নতুন যে, তার ‘মাথা ঠিক আছে’।
নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমি বলেছি, যা বলেছি ঠিক বলেছি। বয়স হলেও আমার মাথা নষ্ট হয় নাই। আমার মাথা ঠিক আছে।’
‘আমি বলেছি নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা যারা সংসদে আছি তাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। আমরা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করব না। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন।’
আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণ ভোট দিতে পারবে, এমন পরিবেশ চাই। নির্বাচন কমিশন ছাড়া নির্বাচনে কারও হস্তক্ষেপ চাই না।’
ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার বিষয়ে আগের কথাই নতুন করে তুলে ধরে এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। জনগণের ভোটাধিকার চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য। আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করব, এটাই আমার বার্তা।’
নতুন বার্তার নামে পুরনো কথা
গণ আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়ার পর পাঁচটি রাজনৈতিক সরকার দেশের জন্য কিছু করতে পারেনি বলে মনে করেন সাবেক সেনা শাসক। বলেন, ‘২৫ বছর বারবার দুটি দল ক্ষমতায় ছিল। জনগণকে কোনো কিছুই দিতে পারেনি। অন্যায়, অবিচার করেছে। জাতীয় পার্টি এত অত্যাচারের মধ্যেও ক্ষমতায় যেতে প্রস্তুত।’
২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এরকমই বলেছিলেন এরশাদ। সেদিন তিনি বলেন, ‘জাপা সুষ্ঠু নির্বচন চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জাপা ক্ষমতায় যাবে।’
সরকারের উন্নয়নের দাবির বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘শুধু বড় বড় কথা। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি, উন্নত হয়েছি। ঢাকায় চাকচিক্য আছে। ঢাকার বাইরে গিয়ে দেখেন দেশের মানুষের কী অবস্থা। মানুষ কীভাবে বাস করছে। খাবার আছে কি না। দুবেলা খেতে পারে কি না। তখন বুঝতে পারবেন আপনারা কতটুকু উন্নয়ন করেছেন।’
গত ১২ মার্চ রাজধানীর এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারেও দলের মতবিনিময় সভাতেও এই কথা বলেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। সেদিন তিনি বলেন, ‘সরকার শুধু ঢাকায়ই উন্নয়ন করছে, কিন্তু ঢাকার বাইরে নজর রাখছেন না।’
আজকের সমাবেশে এরশাদ, ‘মানুষ শন্তিতে বাঁচতে চায়, নিরাপত্তা চায়। কিন্তু কোথাও সুখ নেই, কোথাও শান্তি নাই, নিরাপত্তা নেই। দেশে মাদক আর ইয়াবা। কোথাও চাকরি নেই। যুবকেরা চাকরি না পেয়ে মাদকে ঝুঁকছে। জাতীয় পার্টিই কেবল শান্তি ও সুখ দিতে পারে।’
গত ১৭ জানুয়ারি দলের বনানী কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এরশাদের বক্তব্য ছিল এমন: ‘দেশের মানুষ এখন হানাহানি, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস- এগুলো থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টিই কেবল শান্তি ও সুখ দিতে পারে। জাতীয় পার্টিকে ঘিরে মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার একমাত্র ভরসা এখন জাতীয় পার্টি।’
আজকের সমাবেশে এরশাদ বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংক লুটপাট। শেয়ারবাজার লুট করেছে। সব কিছুতে লুটপাট। সুখবর নেই কোথাও। আমরা এদের বিচার করবো।’
গত ১৭ মার্চ বগুড়ায় দলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এরশাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে, ফারমার্স ব্যাংক লুটপাট করে শেষ করা হয়েছে। কোনো ব্যাংকে টাকা নেই। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আজও রেজাল্ট জানা যায়নি। জানা যায়নি লুটপাটের কারণ। শেয়ার মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে হচ্ছে। শেয়ার ব্যবসায়ীরা আত্মহত্যা করছেন।’
সমাবেশে এরশাদ বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। এতো বড় মহাসমাবেশ আমার জীবনেও দেখিনি। এটা জনসমুদ্র, মহাসমুদ্র। এতেই বুঝা যায় আমরা কতটা শক্তি অর্জন করেছি। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের শক্তি অর্জন করেছে।’
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন