ফেসবুকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়ায় অভিনেতা, নির্মাতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতের ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন এক নারী। রাজধানীর শ্যামপুর থানায় গাজী রাকায়েতের ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ২৬। গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে ওই নারী মামলাটি দায়ের করেন। শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজী রাকায়েত কুটু নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় বিভিন্ন অশ্লীল, অনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুভূতি পরিপন্থী বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব দেয়া হয়। তাকে ওইসব আলাপ বন্ধ করতে বলার পরও তিনি জঘন্য রকম যৌন উত্তেজক কথা বলে আমাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন, উত্ত্যক্ত করেন।’
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এখনো পুরো বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রমাণ ছাড়া এভাবে কারোর বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। আমার বিরুদ্ধে একপেশিভাবে অনেকেই কথা বলছে, এটা ঠিক না। দেশে আইন আদালত কি কিছু নেই? আইডি হ্যাকড হয়েছে বারবার বলা হচ্ছে। একটা মানুষকে এভাবে ছোট করে ফেলছেন, তাকে একবার জিজ্ঞেসও করলেন না? আপনি কি এটা করেছেন কি-না? তারপরে আপনি ফেসবুকে দিয়ে দিলেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় শিগগিরই একটা সলিউশনের দিকে যাবে। বেসরকারিভাবে তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে। এখানে হ্যাকড প্রমাণিত। আইন মানুষের মঙ্গলের জন্য। আমি মামলা না করলে আমার উপায়ও ছিলো না। যে ধরনের বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এখন অনেকেই আমার মামলার ধারাকে কালো আইন বলছে। আমি কি কালো আইন বুঝি নাকি? আমরা থানায় গিয়েছি আবেদন করেছি তারাই মামলাটা ঠুকে দিয়েছে। মামলাটা তাদের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে। ’
‘এখন আমি কার সাথে কথা বলবো। ওই মেয়ের সাথে তো কথা বলা যাচ্ছিলো না। আমার মামলা হয়েছে গত ১৫ মার্চ বেলা সাড়ে ১২টায়। মেয়েটি আমার নামে পর্ণোগ্রাফি মামলা করেছে। আমার মামলার এতোদিন পর সে মামলা করেছে কেন? প্রথমে করতে পারতো না। মামলা করার আগে জানতে হবে গাজী রাকায়েত রাস্তার ফকির নাকি’-প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এদিকে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধিকারকর্মীরা গত বুধবার গাজী রাকায়েতের শাস্তির দাবিতে এশটিপ সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৫৭ ধারার মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ৩১ মার্চ গাজী রাকায়েতের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুমকি দেন তারা।
এ সম্পর্কে গাজী রাকায়েত বলেন, ‘আর কি হবে, যা করার তো করে ফেলেছে। মানববন্ধন করলে কি করা যাবে? কিছু করার তো নাই। একটা মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে সেটার প্রতি একটা শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আইডি হ্যাকড হয়েছে কি-না সেটা আগে বের করো। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নাও। আমি বলেছি কাছের মানুষ। সেটা ভাইরাল হলো কাজের মানুষ। প্রমাণ করুক আমি এটা করেছি।’
এর আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশালীন প্রস্তাবের কথোপকথনের স্ক্রিনশট একটি ক্লোজড গ্রুপে পোস্ট করেন ওই নারী। তার সেই পোস্টের পর ৬ মার্চ গাজী রাকায়েত বলেন, তার দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। পরে অপরাজিতা সংগীতা নামে একজন অধিকারকর্মী ওই স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করেন। তখন গাজী রাকায়েত দাবি করেন, তার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ছিল, তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
শুধু তাই নয়, গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর ১০ মার্চ ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সংগঠন তিনটির নেতারা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অপরাজিতা সংগীতাকে শিল্পী সমিতির অফিসে ডেকে পাঠান। এ সময় তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগীতাকে ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। সংগীতা তাতে সাড়া দেন।
এরপর ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতির পক্ষে ১২ মার্চ ফেসবুক লাইভে এসে সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, গাজী রাকায়েত কুটুর ফেসবুক আইডিটি সিঙ্গাপুর থেকে হ্যাকড হয়েছে। এরপর অধিকারকর্মী অপরাজিতা সংগীতার বিরুদ্ধে আদাবর থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন গাজী রাকায়েত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন