লর্ড কারলাইল ইংল্যান্ডের একজন ব্যারিস্টার। সেদেশের হাইকোর্টে খণ্ডকালীন বিচারক হিসেবে ২৮ বছর কাজ করেছেন তিনি। বিশ্বব্যাপী আইনজীবীদের মধ্যে তার পরিচিতিও কম নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনী পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লর্ড কারলাইল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন ঢাকার বকশিবাজারে অবস্থিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আকতারুজ্জামান। সে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের পাশাপাশি জামিন আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া। আদালত শুনানি শেষে খালদা জিয়াকে চার মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।
এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হয়ে যায়। আগামী ৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। জটিলতা তৈরি হয় খালেদা জিয়ার কারামুক্তি নিয়ে। শুধু তাই নয়, জামিন বিষয়ে কাজের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।
এ সব বিষয় বিবেচনায় রেখে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশে দায়ের করা ৩৬টি মামলায় আইনি পরামর্শক হিসেবে ২০ মার্চ লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেন খালেদা জিয়া। কারলাইল মার্চে নিয়োগ পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার মামলাসহ সব আইনি বিষয়ে কতটুকু কাজ করলেন এবং তার কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে প্রিয়.কমের সঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কথা হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাসহ সব মামলার প্রয়োজনীয় নথিপত্র লর্ড কারলাইলের হাতে পৌঁছানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার আপিল আবেদনের কপিসহ অনেক নথি পাঠানো হয়েছে তার কাছে। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সব নথিও লর্ড কারলাইলকে পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, খালেদা জিয়ার বিষয়ে মামলাসহ সকল বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন লর্ড কারলাইল। কোন কোন গ্রাউন্ডে কারামুক্তি করানো সম্ভব, মামলায় কোন কোন বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ ফাঁক রেখেছেন সে বিষয়টিও ভালোভাবে পর্যালোচনা করছেন লর্ড কারলাইল। শুধু কারামুক্তি নয়, আইনি পরামর্শ ছাড়াও অন্যান্য কাজ করছেন খালেদা জিয়ার এই পরামর্শক।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রিয়.কমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে স্টাডি (পড়াশোনা) করছেন লর্ড কারলাইল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার পক্ষে যেসব আইনজীবী কাজ করেছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময়, আলোচনা, যোগাযোগ হয়েছে কয়েকবার।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘লর্ড কারলাইলের কাজ শুরু হয়েছে, এখনো শেষ হয়নি। খালেদা জিয়া জেলে আছেন এ বিষয় নিয়ে উনি (লর্ড কারলাইল) আমাদের সঙ্গে আবারও কথা বলবেন। খালেদা জিয়ার যত মামলা মোকাদ্দমার বিষয় আছে, আইনি বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে পরামর্শ দেবেন বিট্রিশ এই আইনজীবী। খালেদা জিয়ার সকল মামলাসহ সমস্ত বিষয়ে তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘বেগম জিয়ার মামলার বিষয়ে এ দেশের আইনজীবীদের আইনি পরামর্শ দিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে লর্ড কারলাইলকে। মামলা ছাড়াও অনেক আইনগত বিষয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে কাজ করবেন তিনি। লর্ড কারলাইল ইংল্যান্ডের বর্তমান প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার। ইংল্যান্ডের আদালতে কাজ করছেন তিনি। লবিস্ট হিসেবে নয়, আইনি পরামর্শক হিসেবে তিনি খালেদা জিয়ার পক্ষে কাজ করবেন। আইনজীবী হিসেবে আইনি পরামর্শ দেবেন।’
বাংলাদেশের আইনজীবীদের সঙ্গে লর্ড কারলাইলের যোগাযোগ ও বৈঠকের ব্যাপারে কায়সার কামাল বলেন, ‘আধুনিক যুগে মিটিং হওয়ার প্রয়োজন নেই। এদেশ থেকে আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার মামলার সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি ইন্টারনেটের মাধ্যমে।’
ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘লর্ড কারলাইল তো আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার পক্ষে কাজ করবেন না। আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করবেন তিনি। এটি ভেরি প্রিভিলাইজড ম্যাটার।’
বিষয়টি ক্লায়েন্ট ও আইনজীবীর বিষয় বলেও মন্তব্য করেন খোকন।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া প্রিয়.কমকে বলেন, ‘লর্ড কারলাইলের বিষয়টি এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বিষয়টি। লর্ড কারলাইল নিয়োগ পাওয়ার পর কাজের বিষয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।’
৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর
২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১১ মার্চ হাইকোর্ট নিম্ন আদালত থেকে নথিপত্র আসলে ১২ মার্চ খালেদা জিয়া চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান।
১৫ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর ১৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি।
প্রিয় সংবাদ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন