প্রধানমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হলে মঞ্চের সবাই নাজমুলের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি ফেলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলমকে বক্তৃতা দিতে দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মঞ্চে বসেই তাৎক্ষণিক হাতের ইশারায় জানতে চান, সে কিভাবে এখানে এলো। কে বক্তব্যের সুযোগ দিয়েছে নাজমুলকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মিনিট পার হওয়ার আগেই বক্তব্য শেষ করতে হয় তাঁকে। গত শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিক এক সভায় এ ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অথচ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করার পরপরই এক অজানা কারণে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকি নাজমুল আলম। রাজপথে বিরোধী দলগুলোর ত্রাস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা নাজমুল কেন হুট করে বিদেশে পাড়ি জমালেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এখনো চলমান। অনেকেই আন্দাজ করছিলেন, নাজমুল নিশ্চই এমন কোনো অপকর্ম করেছেন, যে কারণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের কাছে বিরাগভাজন হয়েছেন। গত শনিবার প্রধারমন্ত্রীর বিরক্তি দেখে সেই অনুমানেরই সত্যতা মিললো।
শনিবারের সমাবেশে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা একের পর এব বক্তব্য রাখছিলেন। এরই এক পর্র্যায়ে সভার পরিচালক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বক্তব্য দেয়ার জন্য ডাকে সিদ্দিকি নাজমুল আলমেকে। নাজমুল মাইকে এসে দাড়াতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দিকে ফিরে হাত নাড়িয়ে কিছু একটা বলছিলেন। তিনি পাশে বসা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফকে ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে কিছু একটা বলছিলেন। এক পর্যায়ে সভার পরিচালক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুককে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কিছু একটা বুঝানোর চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি দেখে সিদ্দিকি নাজমুল আলম কথা শেষ করার আগেই ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে, মিনিট খানের মধ্যে ঘটে যায় সবকিছু।
দূর থেকে দেখা এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী তখন কি বলছিলেন তা শোনা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা জানান, নাজমুলকে দেখেই প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাস করেন, ও কে? ও এখানে কি করে এলো। ওকে বক্তব্য দিতে কে বলেছে? তখন সৈয়দ ফারুক এসে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে বক্তব্য দেয়ার জন্য বলেছেন।
জানা যায়, পরবর্তীতে শাহরিয়ার আলমের কাছেও এ বিষয়ে কৈফিয়ত চান প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক স্থানীয় একটি অনলাইনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মী বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। হলভর্তি সবাই দেখেছেন নাজমুলকে কেন কিভাবে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিতে হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীকে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছেন সেটাও সবাই দেখেছেন। তাই এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
মঞ্চে উপবিষ্ট যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সিদ্দিকি নাজমুল আলমের প্রতি নেত্রী যে এতটাই ক্ষুব্ধ তা তাঁরা কখনো চিন্তাও করতে পারেন নি। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তাঁরা ভবিষ্যতে নাজমুলের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন বলে জানান। তবে কেউ উদৃত হয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
ওয়ানবাংলানিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন