বাংলাদেশ তারেক রহমানের আব্বার দেশ উল্লেখ করে তার দেশে ফেরার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ওস্তাদি’ না করতে বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু কন্যার বক্তব্যের পর দিন এসব কথা বলেন বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রবিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকাস্থ ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী পরিষদ।আগের দিন যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের এক আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের কাছ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, যেভাবেই তারককে দেশে ফেরত নেবই নেব। ব্রিটিশ সরকারের সাথে আমি কথা বলেছি।’সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের শুরুর দিকে গ্রেপ্তার তারেক রহমান পরের বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। এরপর জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আর ফেরেননি।দুই বছর আগে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে।খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করেছে বিএনপি।দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেকের বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন মামলা চলছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিচার একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই মামলায় বিএনপি নেতার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার যুক্তরাজ্য সফরে চার দিনের ব্যবধানে দুইবার তারেককে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা জানান। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে ফেরাতে সরকারের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট।আবার প্রধানমন্ত্রীর সবশেষ বক্তব্যের পর রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদেরকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েই তারা তারেককে ফেরানোর আলোচনা চালাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে বন্দীবিনিময় চুক্তি না থাকলেও মিউচ্যুায়াল লিগ্যাল এসিসটেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী এই আলোচনা আগাচ্ছে।
তবে তারেক রহমানকে ফেরানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তারেকেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চরম ক্রোধ ও হিংসার বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে যেন প্রতিহিংসার আগুণ অনির্বাণ।’প্রধানমন্ত্রীরে বক্তব্যের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘এটা তারেক রহমানের আব্বার দেশ। তারেকের আব্বা জিয়াউর রহমান এই দেশটাকে স্বাধীন করেছেন। এ দেশে তো তারেক আসবেনই।’‘এটা নিয়ে আপনার ওস্তাদি করার দরকার নেই। তারেক রহমান যখন আসবে তখন আপনি আর থাকতে পারবেন না।’বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা যদি জেল ভয় না পাই, আমরা যদি জেলে যেতে চাই, তাহলে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।’
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়াকে সরকার ‘টেস্ট কেইস’ হিসেবে নিয়েছে জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে, জামিন না দিয়ে কিছুদিন আটকে রাখার পর বিএনপির অবস্থাটা কী হয়। তারা ভেবেছিল হয়তো বিএনপির কিছু লোক তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানবে না, এরকম একটা ছক এঁকেছিল বলে আমার মনে হয়। কিন্তু তারেক রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি ইউনাইটেড।’‘তার (তারেক) নেতৃত্বে দল চলতে, ফিরতে, কথায় কোনোরকমের অসামঞ্জস্যতা নাই। উনার ভাবনা আমাদের ভাবনা একাকার। সবাই (নেতা কর্মীরা) এখন নিজেদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়টা বিসর্জন দিয়েছে।’গয়েশ্বর বলেন, ‘রাজনীতির দৃষ্টিতে, প্রথম প্রতিবাদ, তার পর প্রতিরোধ, তার পর প্রতিশোধ। এখন কোন পর্বটা কখন শুরু হবে, এটা অপেক্ষা ও ভাববার ব্যাপার। তবে এটা যে বিনা চ্যালেঞ্জ যাবে না এ কথাটা ভাবতে হবে।’
আ.লীগের ভারত সফর প্রসঙ্গ
সকালে আওয়ামী লীগের ১৯ নেতার ভারত সফর নিয়েও কথা বলেন গয়েশ্বর। বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের যে দেশে গিয়েছেন তাদের প্রতি বলে গেলেন ওনারা (ভারত) কারো প্রতি হস্তক্ষেপ করেন না। তো উনারা যদি হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে আপনাদের আয়ুস্কাল যে বেশিদিন নাই এ কথাটাও আপনাদের ভাবা ভালো।’‘তারা (ভারত) তা (হস্তক্ষেপ) যদি না করেন, তারা সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশের লোক হিসেবে আরেকটি দেশের গণতন্ত্র দেখার জন্য তারা (ভারত) অপেক্ষা করে, তাহলে অবশ্যই আমরা আশাবাদী বাংলাদেশে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে যা খুশি তা করতে পারবে না।’
ভৌগলিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সব সময় সু সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা চাই বন্ধুত্ব, ওনারা চায় কতৃত্ব এইটুকু পার্থক্য। বিএনপি তাদের সাথে বন্ধুত্ব চায় না, তা নয়। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নাই। এই শব্দটা তাদের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের বন্ধু না বলে প্রভু বলতাম তাহলে চিত্রটা অন্যরকম হতো। উনারা একজন ব্যক্তি ও দলের সাথে বন্ধুত্ব চান।’আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক নুরুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, বিএনপির সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আকতার রান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন