দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার এপ্রিল শপথ নিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই শপথের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্রপতি হওয়ার এক বিরল রেকর্ড গড়লেন তিনি।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে ১৭ তম।
তবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন কেবল আবদুল হামিদই। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ।
বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর থেকে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন রাষ্ট্রপতি। আর সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কারও রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগ নেই। কারণ, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না সংসদ সদস্যরা।
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারে আসার পর একবার ভোট হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদে। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের আমলে সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিএনপি পরের আমলে প্রথমে বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং পরে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইন্তেকাল করলে আবদুল হামিদ কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পরে আবদুল হামিদ নির্বাচিত হন। তাদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী একজনের পক্ষে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়া সম্ভব। আর আবদুল হামিদই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হলেন।
অবশ্য এর আগে ৯১ সালের পর বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় আমলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সাত বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দুই বছর তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন জরুরি অবস্থা জারির সুবাদে।
এবার রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষিতে এই পদের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম এসেছিল গণমাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও যাদের নাম এসেছিল তাদের বিষয়ে চিন্তাভাবনাও করা হয়েছিল। তবে শেষমেশ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয় মেয়াদে রাখার বিষয়ে একমত হন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করতে দলের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বঙ্গভবনে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত তার হাতে তুলে দেন।
আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য জীবন
আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তার ‘সাধারণ মানুষের’ পরিচয় ধরে রেখেছেন। নানা সময় তার সে নমুনাও দেখা গেছে।
২০১৭ সালের মার্চে কিলোরগঞ্জের মিঠামইন সফরে গিয়ে রিকশায় করে রাষ্ট্রপতির বাজার পরিদর্শনের ছবিতে মানুষ চমকিত হয়েছে, তবে আবদুল হামিদ বরাবর তার এই সাধারণ মানুষের ভাবমূর্তি কখনও পাল্টাতে চান না।
২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে হোটেলে নামি হোটেলের স্যুইট ভাড়া দিনে সাত হাজার ডলার শুনে কম দামি হোটেলে ৬০০ ডলারের স্যুইটে থেকেছেন। ফলে আগের সফরে গ্র্যান্ড হায়াতে রাষ্ট্রপতির হোটেল স্যুইটের ভাড়া যত ছিল সে সময় ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের (নিরাপত্তাকর্মীসহ) সবার হোটেল ভাড়া মিলেও তত হয়নি।
আবদুল হামিদ বরাবর জনগণের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি বহুবার বিষয়টি বলেছেন। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ তার ভালো লাগে না। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তিনি বিশেষ করে নিজ এলাকার লোকদের জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত রেখেছেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন