কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল ইউনিয়নের দোত্লা গ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া এ গ্রামটিতেই পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে বসবাস ইয়াবা পাচারকালে আটক গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাছির উদ্দিনের (৩৮) পরিবারের।
সীমানা প্রচারী ঘেরা বাড়ির প্রধান ফটকে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বাড়ির উঠানে রয়েছে তিনটি মাইক্রোবাসসহ চারটি গাড়ি। ১০ কক্ষ বিশিষ্ট দুই ইউনিটের বিশাল বাড়িটির ভবনের এক ইউনিটের কাজ শেষে হলেও অপর ইউনিটের কাজ চলছে।
নাছির কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোত্লা গ্রামের টেম্পু চালক নুরু মিয়ার ছেলে।
এএসআই হওয়ার পর থেকে এই চার বছরের ব্যবধানে নাছির উদ্দিনের অবস্থা ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার মতো তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবর্তন ডটকমের অনুসন্ধানে এমনটি জানা গেছে।
নাছির উদ্দিন এক সহযোগীসহ মঙ্গলবার রাতে চার হাজার ইয়াবার একটি চালান নিয়ে কুমিল্লায় আটক হয়েছেন। তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটির গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত।
কুমিল্লার চান্দিনা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগদান করে ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়েছেন নাছির।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে রাতারাতি আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে নাছিরের। বর্তমানে তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি লেগুনার সঙ্গে ঢাকা-নবাবপুর রুটে চলছে বাসও।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, এএসআই নাছির ইতোমধ্যে কুমিল্লা শহরে শ্বশুর বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িও কিনেছেন। বেশ কিছু জমিও কিনেছেন মাদক ব্যবসায়ী ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশের একজন এএসআইয়ের চাকরি করে এতো অল্প সময়ে সহায় সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে স্থানীয়দের। এ পরিবারের হঠাৎ উত্থান নিয়ে গ্রামবাসীর মুখে নানা আলোচনা-সমালোচনাও শোনা যায়।
বাড়িতে নাছিরের বাবা নুরু মিয়ার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিন ছেলে ও তিন কন্যার জনক নুরু মিয়া জানান, তিনি একসময় নিজের অটোরিকশা ও টেম্পু চালিয়ে সংসার চালাতেন। বড় ছেলে নাছির উদ্দিন ২০০৬ সালে পুলিশে যোগদান করে। মেঝ ছেলে রিয়াজ থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। আর ছোট ছেলে মামুন এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
বড় ছেলে নাছিরের পুলিশে দ্রুত প্রমোশন পাওয়ার বিষয়টি জানলেও ছেলের ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কেরনখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, পুলিশের এএসআই পদে চাকরি করে মাত্র দুই বছরের মধ্যে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে যাওয়ার বিষয়টি যেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মত ঘটনা। এখন বুঝা যাচ্ছে পুলিশের চাকরির আড়ালে জমজমাট মাদক ব্যবসায় চালিয়ে আসছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা নাছির।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল এলাকা থেকে চার হাজার পিস ইয়াবাসহ মো. নাছির উদ্দিন ও সহযোগী মো. কাউসারকে (২৮) আটক করা হয়। কাউসার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা।
চান্দিনা থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মহাসড়কে অভিযানের সময় ডিবির কর্তকর্তা নাছির সহযোগী কাউসারসহ মোটরসাইকেল যোগে চান্দিনার দিকে আসছিলেন। এসময় সিগন্যাল দিলে নাছিরের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়। পরে নাছিরের দেহ তল্লাশি করে চার হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এসময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়।
চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ঘটনার পরপর নাছির পুলিশের কাছে তার পরিচয় আড়াল করে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সে তার পরিচয় স্বীকার করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাছির বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত আছেন।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছির উদ্দিন মৃধা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ইয়াবা পাচারে আটক পুলিশ কর্মকর্তার নাছিরে র ব্যাপারে এখনো তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আমরা রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ ডিবি কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
পরিবর্তন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন