Related Articles
অস্ত্র
অচল অস্ত্রশস্ত্র বন্ধুদেশকে উপহার দেবে ভারত
8 hours ago
তরুণীকে গণধর্ষণের পর সিগারেটের ছ্যাঁকা
8 hours ago
শরিফুল
রাশিয়ায় জালিয়াতির প্রশিক্ষণ, ঢাকায় কোটিপতি হওয়ার মিশন
8 hours ago
গুম, খুনসহ মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনা ও প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকার। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আগামী ১৪ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের অধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা (এনজিও) মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবেই মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এসব উদ্বেগ ও সম্ভাব্য বিব্রতকর প্রশ্নবাণ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের আওতায় ‘ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ’ (ইউপিআর) প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিআরের ৩০তম অধিবেশনে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের অধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ইউপিআর প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রই তার মানবাধিকার পরিস্থিতি অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। পর্যালোচনা শেষে ইউপিআরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সুপারিশ করা হয়।
বেসরকারি সংস্থা অধিকার, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজ-অ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিভিকাস গ্লোবাল অ্যালায়েন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের সমন্বয়ে গঠিত ‘সলিডারিটি গ্রুপ ফর বাংলাদেশ’ আসন্ন পর্যালোচনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইউপিআরকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় ইউপিআর পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশকে যে ১৯৬টি সুপারিশ করা হয়েছিল তার ১৯টির বিষয়ে দেশটি সুস্পষ্ট কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওই সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তির বিরুদ্ধে সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল, গুম থেকে সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদন, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপবিষয়ক সনদের (সিডও) ২ ও ১৬-র ১(গ) অনুচ্ছেদ এবং ঐচ্ছিক প্রটোকল কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, নারীর সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় নীতি ও আইন বাস্তবায়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারকে (বিশেষ দূত) সফরের আমন্ত্রণ জানানো, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সব অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তে কমিশন গঠন করা অন্যতম।
ইউপিআর মৃত্যুদণ্ড বিলোপের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সলিডারিটি গ্রুপ ফর বাংলাদেশ বলেছে, এ দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউপিআর পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। সরকার সেই অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
গ্রুপটি বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতার অভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রকৃত অর্থে অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ছিল না। ওই নির্বাচনে বেশির ভাগ ভোটারই ভোট দিতে পারেননি। স্থানীয় নির্বাচনগুলোর বেশির ভাগই ছিল ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও সহিংসতাপূর্ণ।
রাজনৈতিকভাবে বিরোধী ও সরকারের সমালোচকদের ওপর ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন’কেও বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে সলিডারিটি গ্রুপ। তাদের অভিযোগ, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেপরোয়া বল প্রয়োগ, হয়রানি আর নজরদারি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সুযোগকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করেছে। নির্যাতন-নিপীড়ন ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়া ও মত প্রকাশ কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে সলিডারিটি গ্রুপ বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকোচন, শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়া ও মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করার কথা উল্লেখ করেছে। গ্রুপটি বলেছে, নিরাপত্তা শঙ্কার কারণ দেখিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও দমন-পীড়ন ও হয়রানির শিকার হচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি কমিশনারদের নিয়োগপ্রক্রিয়াও স্বচ্ছ নয় বলে গ্রুপটি মন্তব্য করেছে।
সলিডারিটি গ্রুপ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন, নারীদের প্রতি অব্যাহত বৈষম্য, কর্মীদের অধিকার এবং রোহিঙ্গাদের নাজুক পরিস্থিতিতেও উদ্বেগ জানিয়েছে।
সলিডারিটি গ্রুপ তৃতীয় ইউপিআর শেষে বাংলাদেশের জন্য তাদের ২৪ দফা সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এগুলোর প্রথমেই আছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান।
ইউপিআরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশও চায় সবাইকে নিয়ে ভালো নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু সেই নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে সেটি বাংলাদেশই ঠিক করবে। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে যথোপযুক্ত উত্তর দেওয়া হবে।
এদিকে এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার) অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রূপবান নামে একটি সংগঠন ইউপিআরের কাছে বাংলাদেশে সমকামী সম্প্রদায়ের মত প্রকাশ, সমবেত হওয়া ও মৌলিক মানবাধিকার না থাকার কথা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। রূপবান বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি, লিঙ্গ, যৌন অভ্যাস যাই হোক না কেন সবার মৌলিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে। সমকামী অধিকার আন্দোলনের নেতা জুলহাজ মান্নান হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে সংগঠনটি এর বিচার দাবি করেছে। তারা সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা আইন বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্বিতীয় ইউপিআরে বাংলাদেশ বলেছিল সরকার সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার কথা বাংলাদেশ বিবেচনা করছে না। এবারও এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে বাংলাদেশ তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করবে।
kalerkantho
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন