গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির করা অভিযোগ ও দাবি কোনোটিই শেষপর্যন্ত টিকল না। এই দুটি সিটি নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদকে নির্বাচনের আগে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি ছিল সংসদের বাইরে থাকা অন্যতম বড় এই দলটির।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকের পর দলটির সব দাবি ও অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সাফ না করে দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। সেরকম প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।
দুই সিটি নির্বাচনের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। নির্বাচন ভবনে বেলা ১১টা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি-র্যাবের মহাপরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা-গাজীপুরের প্রশাসন, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিগত নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে আসন্ন নির্বাচনে তাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রত্যাশা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা।
বৈঠকে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, বিগত দিনে আপনাদের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন সফল হয়েছে। এই নির্বাচনও সফল হবে বলে আশা করছি। সেই আপনাদের পরামর্শও প্রত্যাশা করছি।
আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই সেনা মোতায়েন করা হবে না- এ সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। তবে বিজিবি-র্যাব-পুলিশসহ আধা সামরিক বাহিনী থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক। প্রয়োজনে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে আরো বেশি নিরাপত্তা সদস্য আনা হবে।
আগামী ১৫ মে দুই নগরে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সিইসির সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান এর বিপরীতে। এ বিষয়ে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কমিশনের প্রতি আস্থা রয়েছে বলেই বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে। আস্থা না থাকলে কেমন হবে! তারা তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দল ও প্রার্থীসহ সবাইকে সিইসি বলেছেন- প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
অভিযোগ থাকলেও গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুণ অর রশীদকে প্রত্যাহার না করার ইঙ্গিত দিয়ে ইসি সচিব বলেন, এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসতে হবে। সেখানে তিনি অসহযোগিতা করছেন কিনা দেখতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বা কেউ কোনো অসহযোগিতার রিপোর্ট দেননি। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ২৭ দিনে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদন আসেনি তাদের কাছে। দুই সিটিতে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলেও এ পর্যন্ত কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান ইসি সচিব।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বসবে। আগে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই- মিডিয়া ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে যেন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। সে জন্যে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।
এদিকে বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ান সদস্য নিয়ে গঠিত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৯টি। এ ছাড়া র্যাবের ৫৭টি টিম ও ২৯ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন ও নির্বাচনী অপরাধে তাৎক্ষণিক সাজা দিতে গাজীপুরে ৮৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হবে। অন্যদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য নিয়ে গঠিত ১০টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের টিম থাকবে ৩১টি; বিজিবি থাকবে ১৬ প্লাটুন। এ ছাড়া এ সিটিতে ৪৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন বিচাকির ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিটি প্লাটুন গঠন করা হয় ২০ থেকে ৩০ জন সদস্য নিয়ে। ভোটের মাঠে প্রতি প্লাটুনে কতজন থাকবেন তা এলাকা অনুযায়ী ঠিক করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন