বারবার ঐক্যের দিনক্ষণের ঘোষণা দিয়েও নেপালের প্রধান দুই কমিউনিস্ট পার্টির একত্রিকরণ বিলম্বিত হওয়ায় দেশটিতে থাকা চীনের রাষ্ট্রদূত উ হঙ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের এরূপ প্রকাশ্য ভূমিকা অতীতে কমই দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, নেপালে ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল) এবং দেশের দ্বিতীয় প্রধান দল মাওবাদী সেন্টার (এমসি) গত ফেব্রুয়ারিতে ঐক্যের লক্ষ্যে সাত দফা ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ ঘোষণার পর দুই মাস পেরোলেও এখনও চূড়ান্তভাবে একত্রীকরণের কাজ শেষ করতে পারেনি।
উভয় দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মূলত সম্ভাব্য নতুন দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে বর্তমান উভয় পার্টির হিস্যা এবং নতুন দলটির প্রধান কে হবেন সে বিষয়ে দরকষাকষি শেষ করতে না পারার কারণেই বার বার ঐক্যের দিনক্ষণ পিছিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ এইরূপ দিন নির্ধারিত ছিল ২২ এপ্রিল। ঐদিন এইরূপ কোন ‘ঘোষণা’ না আসার পটভূমিতেই দেখা গেছে, পরদিন কাঠমান্ডুতে নেপালে চীনের রাষ্ট্রদূত ইউএমএল-এর দ্বিতীয় প্রধান নেতা মাধব কুমার নেপালের সঙ্গে দেখা করে একত্রীকরণের বিলম্বে তাঁর দেশের উদ্বেগের কথা জানান। পরদিন দেশটির প্রধান প্রধান প্রচারমাধ্যমে চীনের রাষ্ট্রদূতের এই ‘উদ্বেগ’-এর কথা বড় বড় শিরোনামে প্রকাশিতও হয়। মাধব কুমার নেপাল হলেন ইউএমএল দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা এবং দলটির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান।
কিন্তু চীনের আগ্রহ সত্ত্বেও ইউএমএল-এর মূল নেতা প্রধানমন্ত্রী ওলি মাওবাদী নেতা পুষ্পকুমার দাহাল প্রচন্ডকে ঐক্যবদ্ধ পার্টিপ্রধানের পদ ছেড়ে দিতে পারছেন না– কারণ তার দলের সংগঠকরা একজন মাওবাদীকে ঐ পদে দেখতে চাইছেন না। এছাড়া ওলি ঘনিষ্টরা এও মনে করেন, প্রচন্ড পার্টি প্রধান হলে এবং তার সঙ্গে ওলিবিরোধী হিসেবে পরিচিত মাধব কুমার নেপালের অনানুষ্ঠানিক ঐক্য (উপদল) গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে ওলির প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখাও কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে মাওবাদী দলের সংগঠকরা বলছেন, পার্টি একত্রীকরণ আলোচনার শুরুতেই এই মর্মে অনানুষ্ঠানিক ঐক্যমত ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় প্রধানের পদের মধ্যে একটি পদ প্রচন্ডকে দেয়া হবে। এছাড়া নতুন পার্টিতে কার্যনির্বাহী কমিটিতে মাওবাদী সেন্টার তাদের ৫০ শতাংশ হিস্যা চাইছে। ইউএমএল এটা ৪০ শতাংশের নিচে দিতে ইচ্ছুক।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত বিবাদিত বিষয়সমূহের একটা সুরাহা হবে। কারণ ঐক্যের প্রাথমিক ঘোষণা দিয়ে তা থেকে সরে এলে উভয় দলই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া চীন এক্ষেত্রে যে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করছে তা তাদের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা থেকেও স্পষ্ট।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন