আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। তিনি ও তার পাঁচ ভাই মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মহল। স্থানীয় অনেকের ভাষ্য, বদি দেশের ইয়াবা জগতের প্রধান নিয়ন্ত্রণকর্তা, যার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। তবে এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে মিডিয়া ও প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন এই এমপি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্প্রতি দেশের ‘গডফাদার’দের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। দেশজুড়ে এর সংখ্যা ১৪১ জন। এতে ক্ষমতাধর অনেক রাজনীতিকের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। এর মধ্যে প্রথম দিকে এসেছে আবদুর রহমান বদির নাম। এখানেই থেমে থাকেনি অভিযোগ, পৌঁছেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত।
বিষয়টি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বারস্থ হয়েছে। তালিকাভুক্ত মাদক গডফাদারদের নাগাল পেতে ব্যর্থ হয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে তালিকা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, অন্তত এদের অবৈধ আয়ের পথ ও বিশাল অর্থবিত্তের খোঁজ পেতে সক্ষম হবে দুদক।
দুদকে দেওয়া তালিকায় এমপি আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের ‘একচ্ছত্র অধিপতি’ বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে উঠে এসেছে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও। তারা হলেন মৌলভী মুজিবুর রহমান, আবদুস শুক্কুর, মো. সফিক, আবদুল আমিন ও মো. ফয়সাল। তবে সহোদর ভাই ছাড়াও তালিকায় বদির পিএস মং মং সেন ও ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপুসহ আরও বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠভাজনের নাম রয়েছে।
এমন বাস্তবতায় বদিকে নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে দেওয়া উচিত বলে বদি যে মন্তব্য করেছেন, তা সেই আলোচনায় ঘি ঢেলেছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে ২২ মে, মঙ্গলবার প্রিয়.কম টেলিফোনে যোগাযোগ করে বদির সঙ্গে। সেই আলাপে ক্রসফায়ার, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন বদি। এর পুরো অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রিয়.কম: ক্রসফায়ার বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
বদি: ক্রসফায়ার হচ্ছে যারা এইটার (মাদকের) সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রিয়.কম: গুলি করলে বা ক্রসফায়ার দিলেই কি আইনের আওতায় আনা যাবে অপরাধীদের?
বদি: আমার কথাটা আগে বোঝার চেষ্টা করেন আপনি। যারা ইয়াবা ব্যবসা করে যুব সমাজ ধংস করছে, এই যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কারণে। এই অল্প মানুষের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া উচিত। এই সেন্সে আমি ক্রসফায়ার বলছি। ১৮/১৯ বছরের ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, যারা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাই বোঝে না। ওই ছেলেগুলারে ব্যবহার কইরা আজকে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।
প্রিয়.কম: কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে?
বদি: বর্তমানে যেভাবে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, এভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এটা সরকার ছাড়া কারো পক্ষেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না।
প্রিয়.কম: আপনি কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
বদি: আমি প্রশাসনকে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। আমার সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটিতেই একটি করে পৌরসভা আছে। সাতটি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডেই আমি জনসচেতনতা তৈরি করেছি।
প্রিয়.কম: তরুণদের (মাদক ব্যবসায়ী) ফিরিয়ে আনতে আপনি কী করছেন?
বদি: তরুণদের (মাদক ব্যবসায়ী) আমি বলছি, দেখো তোমরা আইনের আওতায় চলে আসো, আত্মসমর্পণ করো। যারা এগুলার সাথে জড়িত, তোমরা সরকারের কাছে সারেন্ডার করো। কারণ বার্মা সরকার চাচ্ছে, আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য। এই সমস্ত মালগুলা (মাদক) বার্মা আর্মিরা বিক্রি করতেছে। আর্মিরা কাদেরকে দিচ্ছে? যেসব তরুণ ছেলেগুলা আছে, তাদেরকে দিচ্ছে। তারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।
প্রিয়.কম: মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বাংলাদেশে আপনার এলাকা দিয়েই তো আসে। এ ক্ষেত্রে কি আপনার কিছুই করার নেই?
বদি: আমার যা করার, তা তো করছিই। আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি। অনেককে ধরে ধরে কারাগারেও পাঠাচ্ছি। আমি যখন এটার বিরুদ্ধে বেশি প্রতিবাদ করতে যাই, মিডিয়া ও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আমার বিরুদ্ধে গিয়া...। পিছন দিক থেকে কিছু লোক এটার সঙ্গে জড়িত। আমি তো সবসময় বলি, কিছু মিডিয়ার লোক, কিছু প্রশাসনের লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি যেখানে যাই, সেখানেই বলি, যেকোনো সভায় আমি এটার বিরুদ্ধে বলি। তখন তারা আমাকে কালার করে মিডিয়ার মধ্যে প্রচার করে বসে থাকে। এইটাই করছে আমার ইমেজটা নষ্ট করার জন্য। এলাকার মধ্যে জিজ্ঞাসা করলেই পাইয়া যাবেন। এটা তো আয়নার মতো পরিষ্কার।
আমি সংসদের মধ্যেও চ্যালেঞ্জ করছি। বাংলাদেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এবং যারা মিডিয়ায় আছে, তাদের কারো কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে, এমপি বদি কারো সাথে কথা বলেছে। এখন তো তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, একজনের সাথে একজন কথা বললে এখন রেকর্ডিং হয়ে যায়, ভাই। ইয়াবা একটা নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে কারো সঙ্গে এমপি বদি কথা বলেছে, এ রকম কোনো তথ্য থাকলে প্রকাশ করেন। আমি সংসদেও বলেছি। আমার ভাষণের মধ্যেও বলেছি, প্রমাণ করেন।
প্রিয়.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।
বদি: প্রিয়.কমকেও ধন্যবাদ।
২২ মে, মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এমপি বদির মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘দেখুন, যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সে যা-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। বদির বিরুদ্ধে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। যথাযথ তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিনষ্ট করতে চাই না। তাই যেকোনো মূল্যে মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা করব।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন