দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকে নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাবলী নিঃসন্দেহে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য শুভ ইঙ্গিত।
কর্নাটকের একক বৃহত্তম দল বিজেপিকে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এই সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে চিরাচরিত বেচাকেনা ও অর্থশক্তির নির্লজ্জ প্রদর্শনী বন্ধ করা সম্ভব হয়। পরিণতিতে মুখ্যমন্ত্রী হতে ইচ্ছুক বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে পরাজয় শিকার করতে বাধ্য হতে হয়।
নির্বাচন-পরবর্তী জেডি (এস) ও কংগ্রেস জোট সেক্যুলার দলগুলোর হাতিয়ার এবং তারা এই সম্ভাবনাও জাগিয়েছে, বিরোধী জোট ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনকে কার্যকরভাবেই চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।
যারা বিশ্বাস করে, বিজেপি ভারতের মূল দর্শনকেই ধ্বংস করছে, তাদের জন্য একটি খুবই ভালো একটি খবর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরোধী জোট গড়ার অন্যতম উদ্দীপনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। উত্তর প্রদেশে তিনি মায়াবতী-অখিলেশ জোট গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তারপর কর্নাটকে দেবগৌড়া ও ছেলে কুমারস্বামীকে বিজেপির শিবিরে না গিয়ে কংগ্রেসে যোগ দিতে উপদেশ দিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সহিংসতার পর পশ্চিমবঙ্গে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার পর মমতার ভালোভাবেই বিশ্বাস করার কারণ ছিল, কর্নাটক যদি বিজেপির অধীনে চলে যায়, তবে গেরুয়া শিবিরের পরবর্তী টার্গেট হবেন তিনি। বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ ত্রিপুরায় বিজেপির অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর থেকেই তিনি ভীত রয়েছেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির পাল্টা আগ্রাসন তৃণমূল শিবিরে ওই ধরনের আশঙ্কাই বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির অন্দরমহল জানাচ্ছে, মমতার ওপর মোদির চাপ বাড়ানোর অন্যতম কারণ হলো তিনি যেন তিস্তা প্রশ্নে তার অবস্থান নমনীয় করেন এবং ২৫-২৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন পশ্চিমবঙ্গে সফরকালে প্রকাশ্যে ইতিবাচক বিবৃতি যাতে তিনি দেন। তিস্তার ব্যাপারে মল্লযুদ্ধে যদি মোদি হেরে যান, তবে তা হবে তার জন্য বেশ বিপর্যয় ব্যবস্থা।
এখন কর্নাটক যেহেতু বিজেপির পথে যায়নি, ফলে এই সম্ভাবনা প্রবল যে গেরুয়া শিবিরে লবণের ছিটা দেওয়ার জন্য কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মমতা উপস্থিত থাকবেন। আর হাসিনার সফরকালে তিস্তার ব্যাপারে মমতা কোন অবস্থান গ্রহণ করবেন তা নিশ্চিত নয়।
কলকাতার বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের মাধ্যমে হাসিনাকে একটি খামবন্ধ চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা। তাতে কী আছে, তা কেবলই অনুমানের বিষয়। হাসিনা এখন তা জানলেও এ সম্পর্কে এখনো কিছু বলেননি।
এটি তার জন্য ভালো না খারাপ খবর তা জানা যাচ্ছে না।
মোদির উপস্থিতিতে হাসিনার সাথে বৈঠক এড়িয়ে যেতে পারেন মমতা। পরদিন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট পদবি প্রদান অনুষ্ঠানের সময় মোদির অনুপস্থিতিতে তার সাথে সাক্ষাত করবেন মমতা। মমতা হয়তো তখনই তিস্তা প্রশ্নে তার ইতিবাচক বিবৃতিটি প্রকাশ করবেন।
আর এতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য উল্লাসের কারণ হবে। কারণ সন্ত্রাস প্রশ্নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে হাসিনা এদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা ভোগ করেন।
তিস্তা প্রশ্নে মমতা যদি ইতিবাচক মন্তব্য করেন, তবে তিনি মোদির কাছ থেকে লাইমলাইট কেড়ে নিতে পারবেন। তিনি মোদির চেয়ে অনেক ভালোভাবে বাংলাদেশের জনসাধারণের সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করতে পারবেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যুর ঘটনা মমতার ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন তিস্তা প্রশ্নে ইতিবাচক পদক্ষেপ তাকে ওই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে পারে। তাকে তখন জাতীয় নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে। আর তাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের আকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন।
তবে মমতা কী করবেন সে সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ ও এর নেতাদের অপেক্ষায় রাখতে পারেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন