যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল একটি হত্যা মামলায় বিশেষ বিবেচনায় নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির আগেই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ঘটনা এটি। সেই দৃষ্টান্তকে ঢাল বানিয়ে হত্যা, নাশকতা ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২৪ মে, বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় হত্যা, নাশকতা ও নড়াইলের মানহানির মামলায় জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়।
নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ী বাবুলের মতো খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দেবে কি না—এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন, আইনজীবীদের রয়েছে ভিন্নমত।
কেউ বলছেন, আদালত দৃষ্টান্ত অনুয়ায়ী বাবুলকে জামিন দেবে। আবার অনেকের অভিমত, এ রকম জামিন দিলে হাইকোর্টে মামলা জট বেড়েই চলবে। তবে এই ভিন্নমতের সমাধান পাওয়া যাবে ২৭ মে, রবিবার। এ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।
খালেদা জিয়ার জামিন বিবেচনা করতে আদালতে অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো—খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়স্ক, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে তার নাম নেই। তবে নড়াইলের মামলায় আছে।
আদালতে খন্দকার মাহবুব আরও বলেছেন, ‘দায়রা আদালতের পরিবর্তে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী।’
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আদালতে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া হুকুমের আসামি।’
এসব মামলার ব্যাকগ্রাউন্ড টেনে মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নির্দেশেই কুমিল্লায় নাশকতা করা হয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এসব দায় খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না। কাজেই তাকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।’
মাহবুবে আলম আদালতে আরও বলেছেন, ‘দায়রা আদালতে মামালাগুলোর জামিন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। সেখানে জামিন আবেদনগুলো বিচারাধীন। কাজেই খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে দায়রা আদালতে যেতে হবে, হাইকোর্টে নয়। হাইকোর্ট যদি বিশেষ বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেন, তাহলে মামলা জট বেড়েই চলবে।’
২৪ মে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পর্যন্ত যুক্তি আদালতে তুলে ধরেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। পরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন নির্ধারণ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ রানা প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়রা আদালত ও হাইকোর্টের ক্ষমতা একই রকম।
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জামিন নামঞ্জুর করলে দায়রা কোর্ট অথবা হাইকোর্টে জামিন চাইতে পারেন আসামি। সে হিসেবে আমরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন ফাইল করেছি। আপিল বিভাগেও এ রকম অনেক নজির আছে। আমরা আদালতে এ বিষয়ে নজির দেখিয়েছি।
২০০৩ সালে একটি হত্যা মামলার আসামি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামিন চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) আদালতে আবেদন করেন বাবুল। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে বাবুল আবেদন করেন দায়রা আদালতে।
দায়রা আদালত বাবুলের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব করবে, এমন আশঙ্কায় বাবুল চলে আসেন হাইকোর্টে। হাইকোর্টে বিশেষ বিবেচনায় বাবুলকে জামিন দেন।
নুরুল ইসলাম বাবুলের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। শুনানি শেষে আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এ রকম বিশেষ বিবেচনায় হাইকোর্ট অনেক আসামিকে জামিন দিয়েছেন। যে নজিরগুলো আদালতে তুলে ধরা হয়েছে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য।’
এদিকে তিন দিন ধরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করা হয়। এর আগে গত ২০ মে, কুমিল্লা ও নড়াইলের তিন মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন