কার্ড পেতে ‘ঘুষ’ লাগে, কিন্তু বৃদ্ধ মানুষ এই শেষ বয়সে ঘুষ দিয়ে ‘পাপ’ করতে চান না। তাই অল্প পুঁজিতে ডিম কিনে বিক্রি করার ব্যবসায় নেমে পড়েন।
ভোটার তালিকানুযায়ী ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম আক্ষেপ করে জানান, ছেলেরা বিয়ে করে সংসারি হওয়ায় তাদের নিজেদেরই অনেক সমস্যা বেড়েছে।
এর মধ্যে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বোঝা কী করে বইবে! জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের বারবার ধরনা দিয়েও একটি বয়স্কভাতার কার্ড পাননি।
একসময় জমিজমা ভালোই ছিল। তিনটি ছেলের পড়ালেখা করাতে বিক্রি করেছেন প্রায় সব জমিই। ছেলেরাও বড় হয়ে সংসারি হয়েছে, একজন তো বিদেশে চাকরি করে কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে দিয়েছে।
দেখাশোনা তো পরের বিষয় খোঁজখবর পর্যন্ত রাখে না। জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ডিম বিক্রির ব্যবসায় যোগ দেন তিনি।
অভাবের তাড়নায় টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে সপ্তাহে দুদিন সুলভমূল্যে ডিম বিক্রি করে স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম।
বাজার দরের চেয়ে কিছুটা কম দামে ডিম বিক্রি করেন তিনি। ডিম বিক্রি করে যে কয় টাকা মুনাফা হয়, তা দিয়েই স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি চলে যায় সংসার।
দাম কমের জন্য পুরাতন আদালত রোডে আব্দুস ছালাম একজন সুপরিচিত ডিম বিক্রেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিম বিক্রেতা আব্দুস ছালাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ৭নং আলোকদিয়া ইউনিয়নের সিংরামবাড়ি গ্রামের মরহুম রুস্তম আলীর ছেলে।
সপ্তাহে দুদিন ডিম বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালোই চলে। আব্দুস ছালাম সপ্তাহের পাঁচ দিন নিজের এলাকা মধুপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পাইকারি দরে হাঁস-মুরগির ডিম কেনেন আর সেই ডিম সপ্তাহে দুদিন টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে বিক্রি করেন।
বাজার দরের চেয়ে প্রতি হালিতে (চারটি) ১-২টাকা কম দামে বিক্রি করায় তার ডিমের চাহিদাও ব্যাপক। স্থানীয় ক্রেতারা বলতে গেলে বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম কবে ডিম নিয়ে আসবেন সে অপেক্ষায় থাকেন।
প্রথমে তিনি মধুপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ির গৃহিণীদের কাছ থেকে ডিম কিনে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্রি করতেন। তাতে তেমন লাভ হতো না।
এরই মধ্যে জনৈক ব্যক্তির মুখে শুনতে পান মধুপুরের চেয়ে টাঙ্গাইল শহরে ডিমের দাম হালিতে ৩-৪ টাকা বেশি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন মধুপুর থেকে ডিম কিনে টাঙ্গাইল শহরে বিক্রি করবেন। সেই থেকে শুরু, চলছে এখনও!
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল শহরে হাঁস-মুরগির (দেশি) ডিমের বাজারমূল্যের চেয়ে তিনি হালিতে ১-২ টাকা কম দাম নেন-এটা ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নয়, দেশপ্রেম থেকে।
তিনি মনে করেন, এক হালি (চারটি) ডিমে ১-২ টাকা মুনাফা করা যুক্তিযুক্ত বেশি হলে পাপ হবে।
তপ্ত রোদ, ঝড়বৃষ্টি কিংবা যত প্রতিকূল আবহাওয়াই থাকুক না কেন আব্দুস ছালামকে দমাতে পারে না। সপ্তাহে দুদিন আদালত রোডে তিনি ডিমের দোকান খুলবেনই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন