তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হবে কিনা- তা ২৪ জুনের নির্বাচনে নির্ধারণ করবেন তুর্কি ভোটাররা। বলা হচ্ছে- নতুন প্রেসিডেন্ট দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী হতে যাচ্ছেন।
নাগরিক অধিকার দমন, দেশের বর্তমান ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং প্রতিকূল বৈদেশিক নীতির কারণে অনেকেই বলেছিলেন যে তারা এরদোগানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। তাদের অনেকের বিশ্বাস, এরদোগান হয়ত এবার হেরে যাচ্ছেন।
এর উল্টো চিত্র, এরদোগানের সমর্থকদের মধ্যে। এরদোগান নির্বাচনে হেরে যাবেন- এমন কোনো পরিস্থিতির কথা তারা কল্পনাও করতে পারছেন না।
ইস্তাম্বুলের ২৫ বছর বয়সী ওমার ইলিমাজ এরদোগানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি সুনামি বন্ধ করতে পারবেন না। তিনি সুনামির মতো দেশকে ধ্বংস করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরদোগান হেরে গেলেও তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তিনি জয়ী হওয়ার জন্য সবকিছু করবেন।’
দেশের উন্নয়নের জন্য একজন শক্তিশালী নির্বাহী প্রধানের প্রয়োজনের কথা বলে নির্ধারিত সময়ের ১৮ মাস আগেই এরদোগান আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।
গত বছরের গণভোটে একজন শক্তিশালী প্রেসিডেন্টের পক্ষে রায় দেয় দেশটির জনগণ। এই রায়ের ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করা হয় এবং প্রেসিডেন্টকে বিচারপতিদের নিয়োগ এবং ডিক্রি জারির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গণভোটের আগে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট পদটি ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
এরদোগান এরই মধ্যে তর্কসাপেক্ষে তুরস্ককে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইস্তাম্বুল সাবেক মেয়র এখন রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থার অধীনে দেশ পরিচালনা করছেন। ২০১০৬ সালের ১৫ জুলাইে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর এরদোগান অনেক সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে ঢুকিয়েছেন। এ নিয়ে কিছুটা সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন তিনি।
ইস্তাম্বুলের বিলগি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ইলটার তারোন বলেন, ‘এরদোগানের কঠোর শাসনে অনেক নাগরিক ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এরদোগান সম্ভবত ৫১ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন না। তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য এখানে সুযোগ রয়েছে।’
এরদোগান দেশটিতে রক্ষণশীল ইসলামিক আদর্শ অনুসরণের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন। পাবলিক সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য হিজাব পরা অনেকটা বাধ্যতামূলক করেছেন এবং অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ধর্ম নিরপেক্ষ দেশগুলির মতো অনেক তুর্কি রক্ষণশীল ইসলামিক আদর্শ থেকে দূরে থাকতে চান। এ নিয়ে অনেক তুর্কিই এরদোগানের ওপর বিরক্ত।
নিলগন ইয়িলমেজ (৫৬) নামে ইস্তাম্বুলের একজন হিসাবরক্ষক বলেন, ‘আপনি যদি সমালোচনা করেন, তবে আপনাকে বহিস্কার করা হয়। এখানে কেবল এরদোগানের প্রশংসা করার স্বাধীনতা আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে চাই।’
ভিন্ন চিত্র এরদোগানের সমর্থকদের। সালিহা কোসকুন (৪৬) নামে একজন গৃহিনী বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট দেশের জন্য অনেক ভাল কাজ করেছেন। এ কারণে আমি অন্য কাউকে ভোট দিতে পারি, তা ভাবতেও পারছি না।’
এই গৃহিণী আরো বলেন, ‘তিনি হেরে যাবেন, তা আমি চিন্তা করতে চাই না। তিনি হেরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে – আমাদের সব অর্জনকে হারিয়ে ফেলা। আল্লাহর ইচ্ছায়, তিনি আবারো জয়ী হবেন।’
সূত্র: ইউএসএ টুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন